আজ বুধবার সকালে কক্সবাজারের উখিয়া ইনানী সৈকতে উদ্বোধন হতে যাচ্ছে তিন দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক ফ্লিট রিভিউ (আইএফআর)-২০২২। তাতে অংশ নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারতসহ বিশ্বের ২৮টি দেশ।
মহড়ায় ৪৩টি যুদ্ধজাহাজ, দু’টি বিএন এমপিএ ও চারটি বিএন হেলিকপ্টার থাকছে। স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ নৌবাহিনী প্রথমবারের মতো কক্সবাজার সৈকতে বর্ণাঢ্য এই আন্তর্জাতিক নৌশক্তি মহড়ার আয়োজন করছে।
এই আয়োজন বিশ্বশান্তি, পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ববোধ ও সহমর্মিতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানোর পাশাপাশি কক্সবাজারকে আকর্ষণীয় পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিশ্বদরবারে উপস্থাপনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। আইএফআর-২০২২ অনুষ্ঠানের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘সীমানা ছাড়িয়ে বন্ধুত্ব’। এই আয়োজনকে সামনে রেখে গত সোমবার গণমাধ্যমকর্মীদের ঘটনাস্থল পরিদর্শনের সুযোগ দেয় বাংলাদেশ নৌবাহিনী।
এই আয়োজন ঘিরে ইনানী সৈকতের মোহাম্মদ শফির বিল সৈকতে (হোটেল রয়েল টিউলিপ বিচ রিসোর্টের সামনে) তৈরি করা হয়েছে প্রায় এক কিলোমিটার লম্বা একটি জেটি। বঙ্গোপসাগরের গভীর পর্যন্ত চলে যাওয়া জেটির আশপাশে রয়েছে কয়েকটি জাহাজ।
উদ্বোধন উপলক্ষে জেটিটি সাজানো হয়েছে আকর্ষণীয়ভাবে। জেটির পাশে তৈরি হয়েছে একাধিক প্যান্ডেল। সেখানে বসে অতিথিরা বঙ্গোপসাগরে ২৮ দেশের নৌবাহিনী, মেরিটাইম সংস্থার মহড়া উপভোগ করবেন। প্যান্ডেলের ভেতরে তৈরি হয়েছে বঙ্গবন্ধু কর্নার। নৌশক্তি মহড়ার উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু কর্নার পরিদর্শন ও নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নির্মিত প্রায় এক কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে কজওয়ে জেটির উদ্বোধন করবেন।
আইএফআর-২০২২-এ অংশ নেয়া দেশগুলো হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া, মিসর, জার্মান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, ইতালি, জাপান, কোরিয়া, মালয়েশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নাইজেরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ওমান, প্যালেস্টাইন, সুদান, সৌদি আরব, সিঙ্গাপুর, শ্রীলঙ্কা, তানজানিয়া, থাইল্যান্ড, তুরস্ক ও সংযুক্ত আরব আমিরাত।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জেটির উদ্বোধন শেষে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশসহ অংশগ্রহণকারী চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, মিয়ানমার, থাইল্যান্ড ও যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজের অংশগ্রহণে আয়োজিত ফ্লিট রিভিউ পরিদর্শন করবেন।
নিরাপত্তার চাদরে কক্সবাজার : দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ
এ দিকে কক্সবাজার শেখ কামাল স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভার জন্য নৌকার আদলে দৃষ্টিনন্দন মঞ্চ প্রস্তুত করা হয়েছে। মঞ্চে একসাথে ২০০ নেতা বসতে পারবেন। আজ বেলা ৩টায় মঞ্চে বক্তব্য দেবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।
এ দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগমন ও জনসমাবেশকে ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করেছে প্রশাসন। জনসভাস্থলে পাঁচ স্তরের এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার স্তরের নিরাপত্তাব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে কেন্দ্র করে পাল্টে গেছে সমুদ্রনগরীর চিত্র। বিভিন্নভাবে সাজানো হয়েছে নগরকে। উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে শহরের প্রতিটি প্রান্তে। সভাস্থলে মূল মঞ্চটি তৈরি করা হয়েছে নৌকার আদলে। এর সাথে থাকবে চারটি উপমঞ্চ। যেখানে কেন্দ্রীয় ও জেলা নেতৃবৃন্দ বসবেন।
একই সাথে উদ্বোধন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জন্য থাকবে আলাদা মঞ্চ। প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ প্রচারের জন্য পুরো শহর ও আশপাশের এলাকায় লাগানো হচ্ছে দুই শতাধিক মাইক। অন্য দিকে নিরাপত্তার জন্য নেয়া হচ্ছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা।
জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পৌরমেয়র মুজিবুর রহমান বলেন, প্রধানমন্ত্রী যেখানে ভাষণ দেবেন অর্থাৎ শেখ কামাল স্টেডিয়ামে বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ঠিক করা হয়েছে যেন বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন না হয়। এ জন্য আমরা জেলা আ’লীগ বিদ্যুৎ বিভাগের সাথে বৈঠক করেছি।
জনসভায় আসা সব কর্মীর জন্য ওয়াশরুমের ব্যবস্থা থেকে শুরু করে খাওয়ার পানি পর্যন্ত প্রস্তুত রেখেছি। জনসভায় কেউ অসুস্থ হলে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এ জন্য আমরা পাঁচ-সাতটি অ্যাম্বুলেন্স প্রস্তুত রেখেছি।
কক্সবাজার জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রফিকুল ইসলাম (প্রশাসন) বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনের তিন দিন আগে থেকে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা পুরো শহরে পুলিশ মোতায়েন করেছি। সভাস্থলের থেকে সাত-আট কিলোমিটার দূরে গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকবে।
এর আগে জনসভার প্রস্তুতি সম্পর্কে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী, বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, এই জনসভা স্মরণীয় করতে নেতাকর্মীদের দিকনির্দেশনা দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি কয়েক লাখ মানুষ হবে। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে আমরা প্রস্তুত।