আজ বুধবার আষাঢ়ের প্রথম দিন। বর্ষার ঝুম ঝুম বৃষ্টির আগমন বাঙালির প্রাণের সঞ্চার করে। পুস্প-বৃক্ষে পায় সজীবতা। কার না ভাল লাগে বৃষ্টি! কার না ভাল লাগে বৃষ্টির শব্দে অতীতে হারিয়ে অনুভূতির জোয়ারে ভাসতে। আর তাই রবিন্দ্রনাথের গানে- মন মোর মেঘের সঙ্গী, উড়ে চলে দিগ্দিগন্তের পানে, নিঃসীম শূন্যে, শ্রাবণ বর্ষণ সঙ্গীতে।
কালিদাস থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ বা নির্মলেন্দু গুণ, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে হুমায়ূন আহমেদ কেউ বর্ষাকে এড়িয়ে যেতে পারেননি। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুতুল নাচের ইতিকথা, পদ্মা নদীর মাঝি, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথের পাঁচালী, জহির রায়হানের হাজার বছর ধরে, হুমায়ূন আহমেদের শ্রাবণ মেঘের দিন- এ বর্ষা এক বিপুল বিস্ময় নিয়ে আবির্ভূত।
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার ‘বর্ষা-মঙ্গল’ কাব্যে লাবণ্যস্নিগ্ধ রূপবতী বর্ষাকালকে নিয়ে লিখেছেন, ‘ওগো সন্ন্যাসী, কী গান ঘনাল মনে।/গুরু গুরু গুরু নাচের ডমরু/বাজিল ক্ষণে ক্ষণে।/তোমার ললাটে জটিল জটার ভার/নেমে নেমে আজি পড়িছে বারম্বার/বাদল আঁধার মাতাল তোমার হিয়া,/বাঁকা বিদ্যুৎ চোখে উঠে চমকিয়া।’
বর্ষা, বাংলা সনের তৃতীয় মাস। এটি বর্ষা মৌসুমে অর্ন্তভুক্ত দুই মাসের প্রথম মাস। আর নামটি এসেছে পূর্বাষাঢ়া নক্ষত্রে সূর্যের অবস্থান থেকে। বর্ষায় গ্রীষ্মের ধুলোমলিন জীর্নতাকে ধুয়ে ফেলে গাঢ় সবুজের সমারোহে প্রকৃতি সাজে পূর্ণতায়। নদীতে উপচেপড়া জল, আকাশে থাকে ঘন মেঘের ঘনঘটা। গ্রীষ্মের দাবদাহে মানুষ যখন পুড়ে তখন বর্ষার ঝুম ঝুম বৃষ্টির বরণডালা প্রশান্তি এনে দেয় মানুষের মনে।
বর্ষার সতেজ বাতাসে জুঁই, কামিনি, বেলি, রজনীগন্ধা, দোলনচাঁপা আরো কত ফুলের সুবাস। কদম ফুলের স্নিগ্ধ ঘ্রাণ গ্রাম কিংবা নগরবাসী সবাইকে মুগ্ধ করে এ সময়ে। লেবু পাতার বনেও যেন অন্য আয়োজন। উপচে পড়া পদ্মপুকুর রঙিন হয়ে ফোঁটে বর্ষাকে পাওয়ার জন্য। কেয়ার বনেও কেতকীর মাতামাতি।