উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে আসামির আগাম জামিন চাওয়ার সুযোগ আপাতত বন্ধ। এমনকি অধস্তন আদালতেও আসামিরা আত্মসমর্পণ করে নিয়মিত জামিন চাওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। ফলে অনেক বিচারপ্রার্থী নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করছেন আইনজীবীরা।
তবে করোনার উচ্চ সংক্রমণের ঝুঁকি এড়াতেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে আগাম জামিনের পরিবর্তে শুধু হাজতি আসামির জামিন শুনানি হচ্ছে ভার্চুয়াল কোর্টে। তবে এক্ষেত্রে অধস্তন আদালতগুলোতে আসামি উপস্থিতির বাধ্যবাধকতা থাকলেও করোনাকালে সেটাও বন্ধ রাখা হয়েছে। কারাগারে করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।
আত্মসমর্পণ করে জামিন চাওয়ার সুযোগ আপাতত বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন বিচারপ্রার্থীরা। করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত আগাম ও নিয়মিত জামিন আবেদনের ওপর শুনানি গ্রহণ ও নিষ্পত্তির নির্দেশনা আপাতত বন্ধই থাকছে বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন সূত্র।
এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এএম আমিন উদ্দিন বলেন, ‘আগাম জামিনের ক্ষেত্রে আসামিকে আইনানুযায়ী কোর্টে সশরীরে হাজির থাকতে হয়। জামিন নামঞ্জুর হলে আসামিকে কারাগারে পাঠানো হয়। কিন্তু ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে পরিচালিত ভার্চুয়াল কোর্টে আসামি কোথায় আত্মসমর্পণ করবেন? সেই ব্যবস্থা তো গড়ে উঠেনি। এ কারণে স্বাভাবিক বিচার ব্যবস্থা চালু না হওয়া পর্যন্ত হয়তো আগাম জামিন বন্ধই থাকছে।’
তিনি বলেন, আগাম জামিনের কোর্টে প্রচণ্ড রকমের ভিড় হয়। এতে বিচারক, আইনজীবী, বিচারপ্রার্থীর পাশাপাশি কোর্ট স্টাফদেরও করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি রয়েছে। হয়তো এ দিকটাও সুপ্রিম কোর্টের বিবেচনায় রয়েছে যার কারণে চালু হচ্ছে না আগাম জামিন শুনানি।
তবে সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, আত্মসমর্পণ করে আসামির আগাম জামিনের যে সুযোগ রয়েছে সেটা চালু করা উচিত। এটা বন্ধ থাকায় অনেক বিচারপ্রার্থী জনগণ অনাকাঙ্ক্ষিত হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তিনি বলেন, যেহেতু ভার্চুয়াল কোর্ট চালু হয়েছে সেহেতু সীমিত পরিসরে হলেও এ ধরনের কোর্টে আগাম জামিন আবেদনের শুনানির ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তাহলে বিচারপ্রার্থী জনগণ নানা হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পাবে।
এদিকে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে আগাম জামিন শুনানি বন্ধ থাকায় তা চালুর জন্য প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি উচ্চ আদালতে ভার্চুয়াল বেঞ্চের সংখ্যা বৃদ্ধির আবেদন করেন।
আইন বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশের বিভিন্ন থানায় প্রতিদিন বহু ফৌজদারি মামলা হয়। এসব মামলায় অনেকে হয়রানির শিকার হয়ে থাকেন। ফলে হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পেতে আগাম জামিন চালুর বিষয়টি ইতিবাচক দৃষ্টিকোণ থেকে সুপ্রিম কোর্ট বিবেচনা করতে পারে, যাতে বিচারপ্রার্থী জনগণের সমস্যা কিছুটা লাঘব হয়।