অবশেষে মেসির হাতেই বিশ্বকাপ ট্রফি

0
39
অবশেষে মেসির হাতেই বিশ্বকাপ ট্রফি
অবশেষে মেসির হাতেই বিশ্বকাপ ট্রফি

লুসাইল স্টেডিয়ামে হয়ে গেলো সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফাইনাল। অবশেষে  স্বপ্ন পূরণ হল মেসির। ৩৬ বছরের অপেক্ষা ঘুচালো আর্জেন্টিনা। মেসির হাতেই উঠলো বিশ্বকাপ ট্রফি। শেষমেশ ৩-৩ গোলের ম্যাচ টাইব্রেকে ৪-২-এ হারিয়েই ভুবন জয় করল আর্জেন্টিনা।

প্রথমার্ধ শেষে ফ্রান্সের বিপক্ষে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ২১ মিনিটের মাথায় লিওনেল মেসির পেনাল্টিতে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। দ্বিতীয় গোলটি করেন অ্যাংহেল ডি মারিয়া। আর্জেন্টিনার একের পর এক অ্যাটাকের সামনে একেবারে নিষ্প্রভ হয়ে পড়ে ফ্রান্স। প্রথমার্ধে বল পজেশন যেমন ধরে রেখেছে তারা,তেমনি অ্যাটাকেও গিয়েছে বারবার।

এদিকে রক্ষণ সামলাতে কালঘাম ছুটে যাওয়া ফ্রান্স একটিও অনটার্গেট শট নিতে পারেনি। অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধেই বদলে গেছে ম্যাচের চিত্র। ম্যাচের ৭৯ ও ৮১ মিনিটের মাথায় জোড়া গোল করে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান কিলিয়ান এম্বাপ্পে। খেলা অতিরিক্ত সময়ে গড়ায়।

অতিরিক্ত সময়ে লিওনেল মেসি ৩-২ গোলে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে নেন। আবারো গোল করে ৩-৩ গোলে ফ্রান্সকে সমতায় ফেরান এম্বাপ্পে। অবশেষে খেলা গড়ায় পেনাল্টি শ্যুট আউটে। পেনাল্টি শ্যুট আউটে ম্যাচ জিতে নেয় আর্জেন্টিনা।

বিশ্বকাপের মেগা ফাইনালে আজ লুসাইল স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স ও আর্জেন্টিনা। আজকের ম্যাচের মধ্য দিয়েই নির্ধারিত হলো কাতার বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন। ম্যাচটি ছিল দুই আর্জেন্টাইন সুপার স্টার লিওনেল মেসি ও অ্যাংহেল ডি মারিয়ার শেষ বিশ্বকাপ ম্যাচ। ফলে এই ম্যাচ ছিল আর্জেন্টাইনদের কাছে বেশ গুরুত্ববহ।

আর্জেন্টিনার শুরুর একাদশে আজ ফেরত এসেছিলেন অ্যাংহেল ডি মারিয়া। এদিকে আজ মাঠে নামার সাথেসাথে নতুন রেকর্ড করেছেন আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। বিশ্বকাপে সর্বোচ্চসংখ্যক ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়লেন তিনি।

এতদিন পর্যন্ত এই রেকর্ডটি ছিল লোথার ম্যাথিয়াসের দখলে। জার্মানির হয়ে ২৫টি ম্যাচ খেলেছিলেন তিনি। আজ লিওনেল মেসি বিশ্বকাপে খেললেন ২৬তম ম্যাচটি। এছাড়াও স্কোয়াড ঘোষণার সময় মার্কাস অ্যাকুনার নাম থাকলেও চোটের কারণে তার পরিবর্তে নিকোলাস টাগ্লিয়াফিকোকে রাখেন লিওনেল স্কোলোনি। ফ্রান্সের শুরুর একাদশে ফেরত এসেছিলেন ডায়োত উপামেকানো এবং আদ্রিয়ান র‍্যাবিয়ট। শংকা কাটিয়ে খেলেছেন অলিভিয়ের জিরুদও।

ম্যাচের শুরু থেকেই আজ আক্রমণাত্মক মেজাজে ছিল আর্জেন্টিনা। ৫ মিনিটের ভেতরেই ম্যাচের প্রথম শট নেন ম্যাক অ্যালিস্টারের। অবশ্য বল চলে যায় সরাসরি হুগো লরিসের হাতে। ম্যাচের ১০ মিনিটের মাথায় ২৫ গজ দূর থেকে আটকে যায় ডি’পলের শট।

পরে কর্নার কিক থেকে আসা হেডারটি রাবিওট ক্লিয়ার করতে না পারায় বলটি বাতাসে ভেসে যায় এবং বক্সে বাউন্স করে। লরিস বলটি ধরতে আসলে, রোমেরো তাকে ফাউল করে বসেন। রোমেরোর সাথে ধাক্কা লেগে প্রচণ্ড ব্যথা পান ফ্রান্সের অধিনায়ক ও গোলরক্ষক হুগো লরিস। প্রায় ৩ মিনিট ফ্রান্স মেডিকেল টিমের সেবাশুশ্রূষার পরে উঠে দাঁড়ান লরিস।

১৬ মিনিট সময়ে গোলের সুযোগ প্রায় তৈরি হয়েছিল আর্জেন্টিনার। কিন্তু মেসির বাড়ানো পাস ঠিকমত রিসিভ করতে না পেরে ডি মারিয়ার নেয়া শট চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। ম্যাচের ২১ মাথায় ডি মারিয়াকে ডিবক্সে ফাউল করেন ওসমান ডেম্বেলে। ফলে পেনাল্টি পেয়ে যায় আর্জেন্টিনা।

স্পটকিক থেকে লক্ষ্যভেদ করতে ভুল করেননি আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসি। ফলে ফ্রান্সের বিপক্ষে ১-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। এবারের আসরে এটি মেসির ষষ্ঠ গোল। এই গোলের মাধ্যমে নতুন রেকর্ড গড়লেন তিনি। বিশ্বকাপের একক আসরে গ্রুপ পর্ব, রাউন্ড অফ সিক্সটিন, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমি ফাইনাল ও ফাইনালে গোল করা প্রথম ও একমাত্র খেলোয়াড় হলেন লিওনেল মেসি।

৩৫ মিনিটের মাথায় ফ্রান্সের ডিবক্সে ফাঁকা জায়গা পেয়ে ম্যাক অ্যালিস্টারের বাড়ানো পাস থেকে বল রিসিভ করে লেফট ফ্ল্যাংক থেকে ফ্রান্সের জালে বল জড়িয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন অ্যাংহেল ডি মারিয়া। ফলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় আর্জেন্টিনা। ম্যাচের ৪১ মিনিটের মাথায় দুটি পরিবর্তন আনেন দিদিয়ের দেশম। অলিভিয়ের জিরুদের পরিবর্তে খেলতে নামেন মার্কাস থুরাম। ডেম্বেলের পরিবর্তে নামেন আগের ম্যাচের সুপার সাব রান্দাল কোলো মুয়ানি।

সংযুক্তি সময়ে হলুদ কার্ড দেখেন এনজো ফার্নান্দেজ। ফলে ফ্রান্স একটি ফ্রিকিক পেয়ে যায়। অবশ্য অ্যান্টেনিও গ্রিয়েজম্যানের নেয়া শটে বল বারের বাইরে দিয়ে চলে যায়।

দ্বিতীয়ার্ধেও আক্রমণের মেজাজ বজায় রাখে আর্জেন্টিনা। পুরো ম্যাচে দারুণ খেলেছেন ডি মারিয়া। প্রথমার্ধে পেনাল্টি আদায় করেছেন, একটি গোল করেছেন। উইং ধরে বারবার উঠে গিয়ে আক্রমণের সুযোগ তৈরি করে দেয়ার চেষ্টা করছেন তিনি। অবশেষে ম্যাচের ৬৩ মিনিটের মাথায় উঠে যান তিনি, তার পরিবর্তে খেলতে নামেন মার্কাস অ্যাকুনা।

এদিকে ম্যাচে কোনো পাত্তাই পায়নি ফ্রান্স। দ্বিতীয়ার্ধে পাওয়া কর্নারটিও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হয় দলটি। বল নিয়ে ডিবক্সে যাওয়ার আগেই বল ছোঁ মেরে নিয়ে গেছেন আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডাররা। এ পর্যায়ে ফ্রান্সের খেলোয়াড়দের শরীরীভাষায় হতাশা স্পষ্ট হয়ে উঠতে শুরু করেছে। ততদিনে একপেশে হতে শুরু করে ম্যাচ। ৭০ মিনিটের মাথায় গ্রিয়েজম্যানের পরিবর্তে নামেন কিংসলে কোমান। থিও হার্নান্দেজের পরিবর্তে নামেন এডুয়ার্ড কামাভিংগা।

৭০ মিনিট সময়ে ম্যাচে প্রথমবারের মতো চোখে পড়ল কিলিয়ান এমবাপ্পেকে। বক্সের ভেতরে বাম দিক থেকে শট নেন তিনি। অবশ্য তার শট চলে যায় বারের ওপর দিয়ে। কিন্তু এ যে বিশ্বকাপের ফাইনাল ম্যাচ। নাটকের শেষ অঙ্ক তখনও যে মঞ্চস্থ হওয়া বাকি। ঠিক এখান থেকেই ক্ষণেক্ষণে রঙ বদলাতে শুরু করে ম্যাচটি।

ম্যাচের ৭৯ মিনিটের মাথায় ডিবক্সের ভেতর রান্দাল কোলো মুয়ানিকে ফাউল করে বসেন নিকলাস ওতামেন্দি। ফলে অতর্কিতভাবে পেনাল্টি পেয়ে যায় ফ্রান্স। স্পটকিক থেকে লক্ষ্যভেদ করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। আর এখান থেকেই ঘুরে দাঁড়ায় ফরাসিরা।

সেই রেশ না কাটতেই ফের গোল উৎসবে মাত্র ফরাসিরা। পেনাল্টিতে গোলের ২ মিনিটের মাঝেই আরো একটি গোল করেন কিলিয়ান এমবাপ্পে। মার্কাস থুরামের অ্যাসিস্ট থেকে আর্জেন্টিনার জালে জড়ান তিনি। ফলে ২-২ গোলের সমতায় ফেরে ফ্রান্স। জমে উঠেছে ফাইনাল। কিলিয়ান এম্বাপ্পের জোড়া আঘাতে কেঁপে ওঠে আর্জেন্টিনার রক্ষণদুর্গ। আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর হয়ে ওঠে ফ্রান্স। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে।

দাঁতেদাঁত চেপে অতিরিক্ত সময়ের খেলা খেলতে শুরু করে দুই দল। রাবিওটের পরিবর্তে খেলতে নামেন ফোফানা। ম্যাচে জমিয়ে রাখা সাবস্টিটিউট কাজে লাগাতে শুরু করেন স্কোলোনিও। ডি পল ও জুলিয়ান আলভারেজের পরিবর্তে খেলতে নামেন লিওনার্দো পারদেস ও লিয়েসান্দ্রো মার্টিনেজ। তবে অতিরিক্ত সময়ের প্রথমার্ধে নতুন চেহারা মাঠে এলেও স্কোরলাইনে আসেনি পরিবর্তন।

কিন্তু অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয়ার্ধে গিয়েই কাঙ্ক্ষিত লিড পেয়ে যায় লা আলবিসেলেস্তরা। আর্জেন্টাইন অধিনায়ক লিওনেল মেসির গোলে ৩-২ এ এগিয়ে যায় দলটি। এটি বিশ্বকাপে মেসির সপ্তম গোল। ১১৬ মিনিটের মাথায় অনিচ্ছাকৃতভাবে বল হাতে লাগে গঞ্জালো মন্টিয়েলের।

ফলে আরো একটি পেনাল্টি পেয়ে যায় ফ্রান্স। স্পটকিক থেকে আবারো শট নিতে আসেন কিলিয়ান এম্বাপ্পে, আবারো নিখুঁত শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। এই গোলের মাধ্যমে হ্যাট্রিক পূরণ করেন তিনি। বিশ্বকাপে এটি তার অষ্টম গোল। ফলে ৩-৩ গোলে আবারও সমতায় ফিরে আসে ফ্রান্স। রুদ্ধশ্বাস ম্যাচ গড়ায় পেনাল্টি শ্যুট আউটে।

ম্যাচের প্রথম পেনাল্টি নিতে আসেন কিলিয়ান এম্বাপ্পেই। যথারীতি গোল করেন তিনি। আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম শট নিতে আসেন অধিনায়ক মেসি। তিনিও মিস করেননি পেনাল্টি।দ্বিতীয় পেনাল্টি নিতে আসেন কিংসলে কোমান। কোমানের শট থামিয়ে দেন এমিলিয়ানো মার্টিনেজ। কিন্তু পাওলো ডিবালাকে থামাতে পারেননি হুগো লরিস।

তৃতীয় পেনাল্টিটিও মিস করেন শুয়ামেনি। বিপরীতে বল জালে জড়ান জার্মান পেজেল্লা। চতুর্থ পেনাল্টি থেকে গোল করেন কোলো মুয়ানি। কিন্তু গঞ্জালো মন্টিয়েলও গোল করলে পেনাল্টি শ্যুট আউটে জিতে যায় আর্জেন্টিনা। ফলে বিশ্বকাপ শিরোপা জিতে ক্যারিয়ারের ষোলকলা পূর্ণ করলেন লিওনেল মেসি।