
দেশে চলমান তাপদাহে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়েছে জনজীবন। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। গরমের তীব্রতা বেড়েই চলছে। এর মধ্যেই গরমে কয়েক জেলায় ছয়জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। অতিরিক্ত গরম শরীরের জন্য ক্ষতিকর। এ সময় বেড়ে যায় নানা রোগ-ব্যাধির প্রকোপ।
যেসব রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়ঃ
ডাইরিয়া, পেটের সমস্যাঃ গ্রীষ্মকালে অতিরিক্ত গরমে রোগজীবাণু বেড়ে যায়। আর বাড়তি জীবাণুর কারণে ডাইরিয়া, ফুড পয়জনিংসহ পেটের নানা রকম রোগ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
- বারবার সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধুবেন।
- পায়খানা কিংবা বমির সংস্পর্শে এসেছে এমন কাপড় বা বিছানার চাদর গরম পানি দিয়ে আলাদাভাবে ধুয়ে ফেলবেন।
- পানির কল, দরজার হাতল, টয়লেট সিট, ফ্লাশের হাতল, জীবাণুর সংস্পর্শে আসতে পারে এমন জায়গা প্রতিদিন পরিষ্কার করবেন।
- বাহিরের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- টাটকা খাবার খেতে হবে।
সর্দি, জ্বরঃ তাপমাত্রা দ্রুত বৃদ্ধি বা কমে যাওয়া, গরমে ঘাম ও রোদের তাপ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ থেকে বেরিয়েই প্রচণ্ড গরম, আবার প্রচণ্ড গরম থেকে এসে খুব ঠান্ডা পানি বা বরফপানি পান করা—এই সবকিছু মিলিয়ে সর্দি, জ্বর হতে পারে।
- সর্দি-কাশিতে প্যারাসিটামল-জাতীয় ওষুধ, অ্যান্টিহিস্টামিন খেলেই হয়।
- প্রচুর পানি ও ফলের রস পান পান করতে হবে।
- প্রচুর বিশ্রাম নিন। স্কুল-কলেজে, অফিস ছুটি নিন।
- ভরপুর ঘুম দিন।
- হাঁচি-কাশির সময় নাক-মুখ টিস্যু দিয়ে ঢাকুন, তারপর সেটি ফেলে দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন।
- শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীদের কাছ থেকে দূরে থাকুন।
হিট স্ট্রোকঃ তীব্র গরমে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ার ফলে হিট স্ট্রোক হয়। সাধারণত শরীরের তাপমাত্রা যদি ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের (১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বেশি হয়ে যায় তাহলে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
- পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে যাতে ডিহাইড্রেশন না হয়।
- ঢিলেঢালা হালকা রঙের পোশাক পরিধান করতে হবে।
- অ্যালকোহল পান থেকে বিরত থাকতে হবে কারণ এতে ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা বে়ড়ে যায়। চা বা কফিও খুব বেশি খাবেন না।
- শসা, তরমুজ, ডালিম এবং কলা খান।
- দুপুর ১২টা থেকে ৩টা বাড়ির বাইরে বের হওয়া থেকে বিরিত থাকুন। বাইরে বের হলে চশমা, ছাতা ব্যবহার করতে হবে।
- বেশি পরিমাণে প্রোটিন খাবার খাওয়ার চেষ্টা করুন। বাসি খাবার খাবেন না।
- ঠান্ডা পানি দিয়ে দিনে ২ থেকে ৩ বার গোসল করুন। অসুস্থ লাগলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
ত্বকের সমস্যাঃ অতিরিক্ত গরমে ত্বকের সমস্যা বেশি দেখা যায়। রোদ, ঘাম, ভাপসা গরমে ত্বকের ওপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ব্রণ, র্যাশ, কালো দাগ, ঘামাচির মতো অহেতুক উপদ্রব শুরু হয় ত্বকে।
- গরমে ত্বক ভালো রাখতে পরিচ্ছন্নতাই প্রধান উপায়। তাই প্রতিদিন গোসল করতে হবে।
- গোসলে নিমপাতার ব্যবহার।
- দরজা-জানালা খোলা রাখতে হবে।
পানিবাহিত রোগ, খাদ্য বিষক্রিয়াঃ প্রচণ্ড গরমের কারণে রাস্তার খোলা খাবার, রাস্তায় বিক্রিত অস্বাস্থ্যকর সরবত পানের কারণে বিভিন্ন পানিবাহিত রোগ হতে পারে। ডায়রিয়া, আমাশয়, কলেরা এবং টাইফয়েড এসব পানিবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায় এই সময়। অতিরিক্ত গরমে খাদ্যে বিষক্রিয়া বেশি হয়। এ সময় সালমোনেলা এবং ক্লোস্ট্রিডিয়ামের মতো বিপজ্জনক অণুজীব খাদ্যে বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে খাদ্যে বিষক্রিয়া হয়।
- দূষিত খাবার বা পানি পান থেকে বিরত থাকতে হবে।
- কম রান্না করা মাংস, কাঁচা শাকসবজি, মাছ এবং ফাস্ট ফুড খাওয়া যাবে না।