অটিজম আক্রান্ত শিশুর প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিয়ে তাদের সমাজের মূলধারায় অন্তর্ভুক্ত করতে পরিবার, শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তাদের অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তাদের লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভা বের করে আনতে হবে, তাদের প্রতিভা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে, যাতে করে তারা সমাজের কাজে আসে, জীবনকে সুন্দর করতে পারে।
শনিবার বিশ্ব অটিজম সচেতনতা দিবস পালন উপলক্ষে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত থেকে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন নিজেদের বাবা-মার জন্য বোঝা মনে না করে। তাদের সঠিক পরিচর্যা করতে হবে, যেন তারা সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠা করতে পারে।
এদের দেখভাল, শিক্ষা ও চিকিৎসার জন্য মা-বাবা, শিক্ষক ও সেবকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করার কথাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
অটিজম সচেতনতায় কন্যা পুতুলের অবদানের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, পুতুল কাজ শুরুর পর দেশে মানুষের মধ্যে অটিজম সচেতনতা বেড়েছে। তারা এখন আর শিশুদের ঘরে বন্দি করে রাখেন না।
আক্রান্ত শিশুর প্রতি সদয় দৃষ্টিভঙ্গির অনুরোধ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অটিজম আক্রান্ত ব্যক্তিরা আলাদা কোনো ব্যক্তি নয়। তাদের আপন করে নিতে হবে। যারা একটু কম অসুস্থ, তাদের সাধারণ স্কুলে নিয়ে গেলে তারা স্বাভাবিক ছেলেমেয়েদের সাথে মেলামেশার সুযোগ পাবে। একে অপরের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবে। সেখানে তারা বন্ধুত্ব করুক, মারামারি করুক.. একসময় তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মাবে। এভাবেই তারা অনেকটা ভালো হয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ও আমাদের নানামুখী কর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়ে অদূর ভবিষ্যতে অটিজম বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ব্যক্তিদের জাতীয় জীবনের মূলধারায় নিয়ে আসব।
তিনি বলেন, এটি কোনো রোগ নয়। কোনো দোষে এটা হয় না। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় তারা বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন। তাদের সবার মতো সমভাবে দেখতে হবে। তারাও আমাদের সন্তান। তাদের প্রতি বিশেষ যত্ন নিতে হবে। আমরা সঠিকভাবে পরিচর্যা করলে এই বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরাও সমাজে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে।
অটিজম আক্রান্ত শিশুর সেবায় গুরুত্বারোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, অটিজম ও এনডিডি বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন শিশু ও ব্যক্তিরা অন্যান্য প্রতিবন্ধী ব্যক্তির চেয়ে আলাদা। এদের মধ্যে মৃদু মাত্রা ছাড়া অন্যান্য মাত্রার শিশু ও ব্যক্তির জন্য জীবনচক্রের প্রতিটি ধাপে প্রয়োজন থেরাপি ও চিকিৎসা সেবা। অন্যের সাহায্য ছাড়া এদের জীবন প্রায় অচল। সে কারণে মাতা-পিতা বা অভিভাবক, শিক্ষক সকলকেই গুণগতমানের সেবা দেয়ার জন্য তৈরি হতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী জানান, অটিস্টিক শিশুদের জন্য সরকার ‘বলতে চাই’ ও ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ নামক দুটি অ্যাপ্লিকেশন তৈরি করেছে। সহায়ক প্রযুক্তি হিসেবে ‘বলতে চাই’ অমৌখিক যোগাযোগ সহজীকরণ করবে। শিশুর অটিজম আছে সন্দেহ হলে সহজেই ‘স্মার্ট অটিজম বার্তা’ অ্যাপ দ্বারা ঘরে বসেই অটিজম আছে কি না তা জানা যাবে। এনডিডি সুরক্ষা ট্রাস্টের আওতায় এ বছরই ১৪টি উপজেলায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে ‘অটিজম ও এনডিডি সেবাকেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, জাতির পিতা প্রথম অনগ্রসর ব্যক্তিদের কল্যাণের কথা চিন্তা করেছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম সংবিধানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তির অধিকার, নিরাপত্তা ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করেন। তিনি ১৯৭৪ সালে দেশের ৪৭টি সাধারণ বিদ্যালয়ে দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সমন্বিত শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ করে দেন।
শেখ হাসিনা জানান, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠন করে। ২০০৪ সালে নিউরো ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধী (এনডিডি) সুরক্ষা ট্রাস্ট গঠন করে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জীবনমান উন্নয়নে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে। এই ট্রাস্ট থেকে ২০০৭ সাল থেকে এই পর্যন্ত ৫ হাজার ৭০১ জনকে ৪ কোটি ৬৯ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হয়েছে। নিউরো ডেভেলপমেন্ট প্রতিবন্ধীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বঙ্গবন্ধু সুরক্ষা বীমা চালু করেছে।
তিনি বলেন, সরকার প্রতিবন্ধিতা সম্পর্কিত সমন্বিত বিশেষ শিক্ষা নীতিমালা-২০১৯ প্রণয়ন করেছে। নীতিমালা অনুযায়ী বিশেষ স্কুল স্থাপন ও অনুমোদনের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সারাদেশে ৭৪টি বিশেষ বিদ্যালয় সরকারি অনুদানে পরিচালিত হচ্ছে।
এনডিডি ব্যক্তিদের জীবনচক্রব্যাপী বিভিন্ন সেবা প্রদানের জন্য ন্যাশনাল স্ট্র্যাটেজিক অ্যাকশন প্ল্যান প্রণয়ন করা হয়েছে। এর আলোকে প্রথম পর্যায়ে ১৪টি অটিজম ও এনডিডি সেবা কেন্দ্র স্থাপন করা হচ্ছে। পরবর্তীতে এসব কেন্দ্র আরও বাড়ানো হবে।