৮০০ বছর পর চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর রহস্য উন্মোচন!

0
31
চেঙ্গিস খান

মঙ্গল জাতির পিতা তিনি। এক সাধারণ মানুষ থেকে নিজ দক্ষতায় বিশাল সেনাবাহিনী গড়ে তোলেন। যদিও তিনি অতি নির্মম ও রক্তপিপাসু নেতা হিসেবে পরিচিত। বলছিলাম চেঙ্গিস খানের কথা। ইতিহাসের অন্যতম বিখ্যাত সেনাধ্যক্ষ ও সেনাপতি। তিনি মঙ্গল গোষ্ঠীগুলোকে একত্রিত করে মঙ্গল সাম্রাজ্য গড়ে তোলেন। প্রশান্ত মহাসাগর এবং ক্যাস্পিয়ান সাগরের আশপাশের সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করেছিলেন।

১১৫০ থেকে ১১৬০ সালের মধ্যে কোনো একসময়ে চেঙ্গিস খান জন্মগ্রহণ করেন। ছেলেবেলা কাটান ঘোড়া চালানো শিখে। মাত্র ৬ ছয় বছর বয়সে নিজ গোত্রের সঙ্গে শিকার অভিযানে যোগ দেন। বাল্যকালেই তার বাবাকে হত্যা করা হয়। এরপর থেকে চেঙ্গিস খান তার মায়ের কাছে সব শিক্ষা-দীক্ষা গ্রহণ করেন।

লাইভ সায়েন্সের এক নিবন্ধ অনুসারে, রোমান সাম্রাজ্যের চেয়েও আঞ্চলিক দিক থেকে আড়াই গুণ বড় ছিল মঙ্গল সাম্রাজ্য। ৪০ থেকে ৫০ বছর বয়সের সময় চেঙ্গিস খান মঙ্গল জাতির গোড়াপত্তন ঘটানোর পর বিশ্বজয়ে বের হন। চীন থেকে তিনি যুদ্ধবিদ্যা ও কূটনীতির মৌলিক কিছু শিক্ষা লাভ করেন। প্রথমেই জিন রাজবংশকে পরাজিত করেন

পালাক্রমে দখল করেন পশ্চিম জিয়া, উত্তর চীনের জিন রাজবংশ, পারস্যের খোয়ারিজমীয় সম্রাজ্য এবং ইউরেশিয়ার কিছু অংশ। তার ভয়ে তখন কাঁপতো গোটা বিশ্ব। সারাজীবন এ অকুতোভয় নেতা শুধু বিশ্বজয়ের নেশায় ঘুরে বেরিয়েছেন।

চেঙ্গিস খান ৬৫ বছর বয়সে মারা যান। তখন চীনের জিয়া রাজ্যের বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছিলেন। তার মৃত্যু নিয়ে যুগে যুগে বিজ্ঞানীরা নানা ব্যাখ্যা দিয়েছেন। কেউ বলেছেন, ঘোড়া থেকে পড়ে মারা গেছেন। আবার কারও মতে, খোঁজাকরণের কারণে তিনি মারা যান। এ ছাড়াও যুদ্ধরত অবস্থায় নিহত হন বলেও যুক্তি-প্রমাণ রয়েছে। তবে কোনোটিই সঠিক বলে প্রমাণ হয়নি।

সম্প্রতি লাইভ সায়েন্সের এক গবেষণায় জানা গেছে, বিখ্যাত এ নেতার মৃত্যুর কারণ ছিল সংক্রামক রোগ। তখন বুবেনিক প্লেগ রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করেছিল। ৮ থেকে ৯ দিন জ্বরে আক্রান্ত থেকে চেঙ্গিস খান মারা যান। তিনি সংক্রামক ব্যাধিতেই মারা যান। তাকে হত্যা করা হয়নি বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

চীনের মিং রাজবংশের সময় সংকলিত ‘ইতিহাস ইউয়ান’ বই অনুসারে, ‘১৮ থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে চেঙ্গিস খান পশ্চিমা শিয়াদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ প্রচারের সময় জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। এর ৮ দিনের মধ্যেই তিনি মারা যান।’

প্রথমদিকে টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার হদিস পান গবেষকরা। তবে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেডের ফিল্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসক ও প্যালিও প্যাথলজিস্ট ফ্রান্সেসকো গ্যালিস বলেছেন, ‘তিনি জ্বরে আক্রান্ত থাকলেও টাইফয়েডের লক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ত বমি বা পেটে ব্যথা তার ছিল না।’

গবেষণাপত্রটির সহ-লেখক, ইতালির কাতানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানী ড. এলেনা ভারোটো বলেছেন, ‘চেঙ্গিস খানের মৃত্যু নেতৃত্বের উপরে রোগের প্রভাবের একটি সাধারণ উদাহরণ হিসেবে কাজ করতে পারে। কোনো রোগই ধনী বা গরীবের জন্য হয় না। চেঙ্গিস খানের মৃত্যু ‘বর্তমান সময়ের নেতাদের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে’।

‘ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ইনফেকটিস ডিজিজ’ এ প্রকাশিত এক গবেষণাপত্র অনুসারে, মঙ্গলরা দুই দশকেরও বেশি সময় ধরে ওয়েস্টার্ন জিয়া সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে আসছিল। যখন চেঙ্গিস খান অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন রাজনৈতিক সুরক্ষার খাতিরে চেঙ্গিস খানের পরিবার ও নিকটতম অনুসারীরা চেঙ্গিসের অসুস্থতার খবর গোপন রেখেছিল। আর এ কারণে তার মৃত্যু সম্পর্কে নানা কল্পকাহিনি রটে।

গবেষণায় চেঙ্গিসের মৃত্যু সম্পর্কিত একটি গল্পের উল্লেখ আছে। উত্তর-পশ্চিম চীনের তিব্বত-বর্মণ উপজাতি টাঙ্গুতের এক রাজকন্যার হাতে ছুরিকাঘাতে মারা যান চেঙ্গিস খান। আরেকটি গল্প এমন- মৃত্যুর একবছর আগে চাইনিজদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় ঘোড়া থেকে পড়ে যান চেঙ্গিস। এতে মারাত্মকভাবে আহত হন। এরপর একবছর অসুস্থ থেকে মারা যান।

আরও একটি ঘটনা অনুসারে, পশ্চিমা শিয়াদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সময় তিনি একটি সংক্রমিত তীরের আঘাতে মারা যান। ফ্রান্সেসকো গ্যালাসি অবশ্য বলেছেন, বৃহত্তর চীনের রাজা ও সম্রাটদের নিয়ে যেসব গল্প বলা হয়েছিল; তার মধ্যে বেশিরভাগই কল্পকাহিনি।

এ গবেষণার মধ্যদিয়ে বিজ্ঞানীরা চেঙ্গিস খানের মৃত্যু সম্পর্কিত পৌরাণিক কাহিনিগুলো মিথ বলে প্রমাণ করেছেন। তবুও এ নেতাকে নিয়ে এখনো অনেক অজানা তথ্য রয়েছে, যা কারও জানা নেই।

চেঙ্গিস খানের মৃত্যুর পর থেকে ৮০০ বছর কেটে গেলেও হাজারো গবেষক তার হারানো সমাধির সন্ধান পাননি। বিবিসি’র এক নিবন্ধে ব্যাখ্যা করা হয়েছে, চেঙ্গিসের মৃত্যুর পরে তাকে ‘গোপনে দাফন করা হয়েছিল’।

চেঙ্গিসের শোকাহত সেনাবাহিনী তার মরদেহ বাড়িতে নিয়ে যায়। যেখানে তাকে সমাধিস্থ করা হয়; সেখানে যাতে আর কেউ না যেতে পারে এজন্য সব সেনাদের হত্যা করা হয়।

সবশেষে চেঙ্গিস খানের সমাধির যেন কোনো প্রমাণ না থাকে; তাই সমাধির উপর ১ হাজার ঘোড়া নিয়ে ঘোড়সাওয়াররা দৌড়ায়। ওইসব ঘোড়সাওয়ারদেরও পরবর্তীতে হত্যা করা হয়েছিল। কোনো ধরনের প্রমাণই মেলেনি চেঙ্গিস খানের সমাধির।