৫০ কোটি টাকার প্রতারককে গ্রেপ্তার

0
22
৫০ কোটি টাকার প্রতারক

হঠাৎ করেই পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সংবাদ সম্মেলন কক্ষের বাইরে হট্টগোল। পরে কক্ষ থেকে বের হয়ে দেখা যায় হাতকড়া পড়া এক আসামীকে ঘিরেই তৈরি হয়েছে এমন পরিবেশ। গালি দেয়া থেকে শুরু করে অনেককেই ওই ব্যক্তিকে মারতে পর্যন্ত উদ্ধত হচ্ছেন।

পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এলে জানা যায় হাতকড়া পড়া ব্যক্তির নাম মো. মশিউর রহমান খান ওরফে বাবু (৪২)। তিনি একজন প্রতারক। এখন পর্যন্ত প্রতারণার মাধ্যমে ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। প্রতারণা ও জালিয়াতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় ও আদালতে জিআর-সিআর মিলিয়ে মামলা রয়েছে প্রায় ৯২টি।

বুধবার রাজধানী মালিবাগের সিআইডি কার্যালয়ে এই ব্যক্তিকেই গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করা হলেই ভুক্তভোগীরা তাকে দেখে এমনটি করেন। এ সময় ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও দামি ইলেকট্রনিক সামগ্রী নাম মাত্র টাকায় কিনে বাকি টাকা পরিশোধ করতেন না বাবু। টাকা চাইতে গেলে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন হুমকি-ধমকি ও মারধরও করতেন।

এ বিষয়ে সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, মেসার্স দেলোয়ার ফ্লাওয়ার মিলের মালিক হাজী মো. দেলোয়ারে হোসেন নামের একজন ভুক্তভোগীর (৫৫) কাছ থেকে পাওয়া অভিযোগের ভিত্তিতে সিআইডি ঢাকা মেট্রোর উত্তর বিভাগের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার মো. জাকির হোসাইন ও টিম-১ এর সহকারী পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জহিরুল হকের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর মহাখালী ডিওএইচএস থেকে মশিউর রহমান খান ওরফে বাবুকে আটক করা হয়।

তিনি আরো বলেন, গ্রেপ্তার বাবু তার সহযোগীদের নিয়ে অনলাইনের মাধ্যমে সব খবরাখবর সংগ্রহ করে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। এরপর তাদের কাছ থেকে বড় বড় অংকের বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী কিনতেন। এরপর নামমাত্র মূল্য পরিশোধ করে অধিক পরিমাণ পণ্য নিতেন। পরবর্তীতে মূল্য পরিশোধের জন্য ব্যাংকের চেক দিলে পাওনাদাররা চেকের টাকা তুলতে না পেরে সর্বস্বান্ত হন।

অতিরিক্ত ডিআইজি বলেন, বাবুর প্রতারণার কৌশল হিসেবে ছিল- বিভিন্ন জায়গায় সুসজ্জিত অফিস নিত সে। এছাড়াও আবরার গ্রুপের একজন বড় বায়ার হিসেবে পরিচয় দিয়ে অন্যান্য কোম্পানি ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করতেন। চুক্তি অনুযায়ী পণ্যের মূল্য বাবদ ১০-৩০ শতাংশ পর্যন্ত টাকা পরিশোধ করতেন। বাকী টাকা চেকের মাধ্যমে পরিশোধ করবে বলে জানালেও ভুয়া চেক দিতেন ব্যবসায়ীদের।

অতিরিক্ত ডিআইজি শেখ ওমর ফারুক বলেন, প্রতারক মশিউর রহমান খান বাবু বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মালামাল কিনে নগদ টাকার বিনিময়ে সেগুলো বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছেন। কিন্তু ব্যবসায়ীদের পণ্যের টাকা পরিশোধ না করে হয়রানি করতেন। এভাবে প্রতারণা করে প্রায় ৫০ কোটি টাকার বেশি আত্মসাৎ করেন।

বাবুকে গ্রেফতারের সময় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত একটি সাদা রংয়ের হেরিয়ার টয়োটা জিপ, দুটি মোবাইল ও তিনটি কম্পিউটারের সিপিইউ জব্দ করা হয়। তার সহযোগিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।