‘গাছ লাগান, পৃথিবী বাঁচান, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, সতর্ক হোন’ এই স্লোগান নিয়ে টানা ৩ মাস সাইকেলে দেশের ৬৪ জেলা ভ্রমণ করে অবশেষে বাড়ি ফিরলেন জামালপুরের মাদারগঞ্জের তরুণ চিকিৎসক আশিষ কুমার মোদক।
তার বাড়ি উপজেলার আদারভিটা ইউনয়নের বিন্যাফৈর গ্রামে। তিনি ঐ গ্রামের অক্ষয় কুমার মোদকের ছেলে। কক্সবাজার ভ্রমণ শেষ করে গত ২৭ জানুয়ারি তিনি বাড়ি ফিরলে সারা গ্রাম উৎসবে মেতে উঠে।
আশিষ কুমার মোদক ময়মনসিংহের কমিউনিটি বেজড্ মেডিক্যাল কলেজ থেকে পাশ করা সদ্য ইর্ন্টান চিকিৎসক। আশিষ তার দুই চাকার সাইকেলে ছুটে দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ৬৪ জেলায় ভ্রমণ শেষ করেন।
গত বছরের ২৭ নভেম্বর তিনি তার সাইকেলটি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন দেশ দেখার নেশায়। ২৬ জানুয়ারি কক্সবাজারের মাধ্যমে তার ৬৪ জেলা ভ্রমণ শেষ হয়। সারা বাংলাদেশ ভ্রমণ শেষ করে সম্প্রতি নিজের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে একটি পোস্ট করেন এবং সেখানে ৬৪ জেলার ভ্রমণ কাহিনীর অভিজ্ঞতার নানা বর্ণনা করেছেন।
তিনি বলেন, ‘কমিউনিটি বেজড্ মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস শেষ করে আমি সাইক্লিং শুরু করি। তারপর আমার সারা বাংলাদেশ সাইকেলে ঘুরার একটা স্বপ্ন পেয়ে বসে। ফাইনাল পরীক্ষার পর ৬৪ জেলা ঘুরে শেষ করার একটা পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই করা ছিলো।
আমার ভ্রমণের উদ্দেশ্য দেশকে জানা, দেশের প্রতিটি জেলার দর্শনীয় স্থানগুলো দেখা, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ করা। আমার অবস্থান থেকে যথেষ্ট পরিমাণ সময় নিয়ে ভ্রমণ করার চেষ্টা করেছি। কতদিন লাগবে এটার চেয়ে, কতটা বেশি সময় নিয়ে দেশকে দেখবো সেটাকেই গুরুত্ব দিয়েছি।’
খুলনা ভ্রমণে থাকাকালীন সময়ে তার এমবিবিএস পরীক্ষার ফলাফল দেয়। এর আগে যথেষ্ট পরিমাণ সময় নিয়ে প্রায় সবগুলো জেলার দর্শনীয় স্থানে যাওয়ার চেষ্টা করেন তিনি।
ডা. আশিষের ভ্রমণের প্রতিপাদ্য স্লোগান ছিলো-‘গাছ লাগান,পৃথিবী বাঁচান, করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত না হয়ে, সতর্ক হোন।’ এরকম উদ্যোগ অনেকে নিলেও সুযোগের অভাবে গাছ লাগাতে পারে না। তবে তিনি প্রায় ৫০ টির বেশি জেলার স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি, মেডিক্যাল কলেজ, দর্শনীয় স্থান, মাদ্রাসা ও মসজিদে নিজ খরচে প্রায় ২০০ এর বেশি গাছ লাগিয়েছেন।
গাছ লাগানো নিয়ে তার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এভাবে সাইকেলে ট্রাভেলিং করে আবার গাছ লাগানো একটা বাড়তি ঝামেলা মনে হতে পারে। তবে আমি এই ঝামেলাটাকে খুবই উপভোগ করেছি।’
এছাড়াও তিনি বলেন, ‘আমি দেশ ভ্রমণ করেছি দেশের অদেখা সৌন্দর্যগুলো দেখার জন্য, অজানা কিছু জানার উদ্দেশ্যে। এই ভ্রমণে আমি আমার পরিবারের পাশাপাশি আমার বন্ধু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাব্বির হোসেনের কাছেও থেকে যথেষ্ট সাপোর্ট পেয়েছি। তিনি নিজেও সাইকেলে সারাদেশ ভ্রমণ করেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘সারা দেশে সবার কাছে অনেক উৎসাহ এবং সহযোগিতা পেয়েছি। সাইকেলে সারাদেশ সফর শেষ, এবার শুরু করবো ডাক্তারি জীবনের পেশাগত সফর।’
পেশাগত সফরেও যেন এভাবেই সফল হতে পারেন সেজন্য ডা. আশিষ সবার কাছে তার এবং তার পরিবারের জন্য দোয়া চেয়েছেন। আশিষ কুমারের এমন সাফল্যে তার নিজগ্রাম নয় সারা জেলা গর্বিত।
ওই গ্রামের ছাত্র শেখ রাঙ্গা বলেন, ‘তারা ডা. আশিষ-এর সাইকেলে দেশ ভ্রমণে খুব গর্বিত। আমাদের মেধাবী ছাত্র আশিষ আমাদের গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করেছেন।’