প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০৪১ সাল পর্যন্ত কী করণীয়, স্বাধীনতার শতবর্ষ উদযাপনকালে ২০৭১ সালে বাংলাদেশ কোথায় যাবে বা ২১০০ সালে এই ব-দ্বীপ অঞ্চলের বাসিন্দারা যেন এক সুন্দর জীবন পেতে পারে, তার একটা পরিকল্পনা করে দেয়া হয়েছে। কারণ, লক্ষ্য যদি স্থির থাকে তাহলে এগিয়ে চলা সম্ভব।
বৃহস্পতিবার সকালে স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২১ প্রদান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ব্ক্তব্যে এ কথা বলেন তিনি। এ সময় ৯ বিশিষ্ট ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান স্বাধীনতা পুরস্কার তুলে দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ভবিষ্যতে দেশকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি কাঠামো করে দিয়ে যাচ্ছে, যা ধরে আগামী প্রজন্ম দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। তার সরকারের ক্ষুদ্র প্রচেষ্টায় তিনি যেটা করতে পেরেছেন, এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটা কাঠামো তিনি তৈরি করে দিয়েছেন। যতটুকু আমরা করে দিয়ে যাচ্ছি, এতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যারাই আসবে তারা যেন উন্নয়নের গতিধারাকে অব্যাহত রাখতে পারে।
তিনি বলেন, এই কাঠামোটা সময়ের বিবর্তনে পরিবর্তনশীল। কারণ যুগের চাহিদার সঙ্গে তাল মিলিয়েই সবাইকে চলতে হবে। আধুনিক প্রযুক্তি, বিজ্ঞানের বিকাশ, নব নব উদ্ভাবন আমাদেরকে নতুন করে পথ দেখাবে। যার সঙ্গে তাল মিলিয়েই চলতে হবে।
যে আদর্শ নিয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল পঁচাত্তরের পর তা হারিয়ে গেলেও আওয়ামী লীগ সরকার সেই আদর্শকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের নতুন প্রজন্ম এখন ইতিহাসকে জানতে চায়। শিকড়ের সন্ধান করে বিজয়ের কথাটা চিন্তা করে নিজেদেরকে গর্বিত মনে করে, এই ধারা অব্যাহত থাকলে অবশ্যই বাংলাদেশ বিশ্বে উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে এবং জাতির পিতার স্বপ্ন আমরা পূরণ করতে সক্ষম হবো।
পুরস্কারপ্রাপ্তদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি এটাই চাই, আপনাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হবে, স্ব স্ব কর্মস্থানে মেধা এবং মননের মাধ্যমে তারা যোগ্য একটা অবস্থান করে নেবে এবং দেশ ও জাতির জন্য তারা কিছু অবদান রেখে যাবে। আপনাদের কাছ থেকে তারা অন্তত উৎসাহ পাবে। দেশের জন্য, জাতির জন্য বা জাতির কল্যাণের জন্য কাজ করতে।
করোনাভাইরাসে মৃতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে তিনি বলেন, দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে সেটা যেন এগিয়ে যেতে পারে সেজন্য সবাই দোয়া করবেন এবং কাজও করবেন। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন ও এই দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী দেশ স্বাধীন হওয়ার পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশ দেখিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন সাংবাদিক এবং গণমাধ্যমের প্রশ্ন ‘এখানে তো কিছুই নেই, আপনি কি করে দেশ গড়বেন’ এর প্রেক্ষিতে বঙ্গবন্ধুর উত্তর, ‘আমার মাটি আছে, মানুষ আছে, আমি এদেরকে দিয়েই বাংলাদেশ গড়ে তুলবো’ স্মরণ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি আমাদের দেশের মানুষ এবং মাটি এটাই বড় শক্তি এবং আমরা সে প্রচেষ্টাই চালিয়ে যাচ্ছি।
দেশের আনাচে-কানাচে মনি-মুক্তার মত অনেক প্রতিভা ছড়িয়ে রয়েছে এবং যার খুব কম সংখ্যক লোককে এখন পর্যন্ত সম্মাননা জানানো সম্ভব হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা জানি হয়তো হাতেগোনা কয়েকজনকে পুরস্কার দিতে পেরেছি, কিন্তু আমাদের সমাজে অনেকে রয়েছে যাদেরকে আমাদের পুরস্কৃত করা উচিত। কারণ সমাজের অনেক ক্ষেত্রে অবদান তারা রেখে যাচ্ছেন। তাদেরকে পুরস্কৃত করতে পারা মানে আমাদের জাতিকে এবং নিজেদেরকে পুরস্কৃত করা।
তিনি বলেন, আমরা চাই আমাদের দেশটা যেন এগিয়ে যায় এবং দেশের মানুষ যাতে সব সময় মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে। আর আজকে দেশের ৫০ বছর পূর্তিতে উন্নয়নশীল দেশের যে মর্যাদাটা পেয়েছি, সেটাকে ধরে রেখেই আমরা আরো সামনে এগিয়ে যেতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, আজকে এইটুকু বলতে পারি, আমাদের সবসময় একটা প্রচেষ্টা ছিল যে, আমরা মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ী জাতি। তাই বিশ্বে মাথা উঁচু করে চলবো। কারো কাছে হাত পেতে, করুণা ভিক্ষা করে আমরা চলবো না। বাংলাদেশকে আত্মমর্যাদাশীল হিসেবে গড়ে তুলবো।
তিনি বলেন, গত ৪০ বছরের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে অন্তত এটুকু করতে পেরেছি যে, বাংলাদেশ আজ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার ৫০ বছর যখন আমরা উদযাপন করছি তখনই এই স্বীকৃতিটা আমরা পেলাম।
স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধ ক্ষেত্রে এবার চারজন স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন। তারা হলেন- মরহুম এ কে এম ফজলুর রহমান, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার, মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল খুরশিদ উদ্দিন আহমেদ ও মরহুম আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু।
বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ক্যাটাগরিতে পুরস্কার পেয়েছেন ড. মৃন্ময় গুহ নিয়োগী। সাহিত্যে কবি মহাদেব সাহা, সংস্কৃতিতে নাট্যজন আতাউর রহমান ও সুরকার-গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছেন।
‘সমাজসেবা/জনসেবা’ ক্ষেত্রে অধ্যাপক ডা. এম আমজাদ হোসেন এবং গবেষণা ও প্রশিক্ষণে স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল।
সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে এ পুরস্কার প্রদান করে আসলেও, এবার করোনার কারণে বিলম্ব হয়। স্বাধীনতা পুরস্কারের ক্ষেত্রে পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে ৫ লাখ টাকা, ১৮ ক্যারেট মানের ৫০ গ্রাম স্বর্ণপদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও একটি সম্মাননাপত্র দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ আয়োজিত এই পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম এবং তিনিই পুরস্কার বিজয়ীদের সাইটেশনও পাঠ করেন। পুরস্কার বিজয়ীদের পক্ষে আতাউর রহমান অনুভূতি ব্যক্ত করে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।