যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় প্রাণহানির নতুন রেকর্ড

0
32
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় প্রাণহানির নতুন রেকর্ড
যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলায় প্রাণহানির নতুন রেকর্ড

ছয় মাসের হিসেবে ২০২৩ সালে বন্দুক হামলায় নিহতের নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে যুক্তরাষ্ট্র। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন— ছয় মাসে বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে বন্দুক হামলার শিকার হয়ে যত মানুষ নিহত হয়েছেন— দেশটির ইতিহাসে এর আগে ছয় মাসে এত নিহতের ঘটনা ঘটেনি।

মার্কিন বার্তাসংস্থা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস (এপি), সংবাদমাধ্যম ইউএসএ টুডে এবং নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালিত একটি ডাটাবেজের তথ্য বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে জুন মাস পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যে মোট ৩৭৭টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং সেসব ঘটনায় নারী ও শিশুসহ নিহত হয়েছেন মোট ১৪০ জন।

ডাটাবেজটির তথ্য অনুযায়ী, আগের বছর ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে বন্দুক হামলায় নিহতের সংখ্যা ছিল ২৭ জন। মাত্র এক বছরের মধ্যে নিহতের সংখ্যা বেড়েছে ৫ গুণেরও বেশি।

এই নিহতদের সবাই ‘নির্বিচারে হত্যার’ (ম্যাস কিলিং) শিকার। যুক্তরাষ্ট্রের প্রচলিত পরিভাষায় কোনো এক ব্যক্তির বন্দুক হামলায় যদি একই সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানে ৪ জন বা তার চেয়ে বেশিসংখ্যক মানুষ নিহত হন, সেক্ষেত্রে সেই হত্যাকাণ্ডকে নির্বিচার হত্যা বলা হয়।

নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জেমস অ্যালেন ফক্স চলতি বছরের পরিসংখ্যানে উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, ‘বন্দুক হামলা যুক্তরাষ্ট্রের একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা এবং যত দিন যাচ্ছে— সেটি আরও তীব্র রূপ নিচ্ছে। কয়েক বছর আগেও বন্দুক হামলায় প্রতি বছর নিহতের সংখ্যা ছিল বড়জোর দুই থেকে তিন ডজনের মধ্যে ওঠানামা করত।’

‘কিন্তু গত বছর প্রথম ছয় মাসেই ম্যাস কিলিংয়ে নিহতের সংখ্যা ২ ডজন ছাড়িয়ে যায়। আর চলতি বছর আমরা যে পরিসংখ্যান দেখতে পাচ্ছি, তা রীতিমতো আতঙ্কজনক।’

যুক্তরাষ্ট্রে আগ্নেয়াস্ত্রের সহজলভ্যতা ও যত্রতত্র তার ব্যবহার বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে নির্বিহার হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা। এমনকি চলতি বছরের ৪ জুলাই দেশটির স্বাধীনতা দিবসেও রাজধানী ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন শহরে বেশ কয়েকটি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনও দেশে বন্দুক হামলার সংখ্যাগত উল্লম্ফণে বেশ কয়েক বার উদ্বেগ জানিয়েছেন। তার রাজনৈতিক দল ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা পার্লামেন্টে প্রচলিত অস্ত্র ক্রয়,সংরক্ষণ ও ব্যবহার বিষয়ক আইনের সংস্কার চেয়ে একাধিকবার বিলও উপস্থাপন করেছেন; কিন্তু বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টির আপত্তির কারণে পাস হয়নি সেসব বিল।

গত ৪ জুলাই দেশজুড়ে বন্দুক হামলার পর এক বিবৃতিতে রিপাবলিকান পার্টির আইনপ্রণেতাদের উদ্দেশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা চাইলেই অ্যাসল্ট রাইফেল এবং উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ম্যাগাজিন বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা দিতে পারি, বন্দুক প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে পারি এবং নাগরিকদের বন্দুক ক্রয়ে কড়াকড়ি আরোপ করতে পারি। আমাদের সদিচ্ছাই এসব পদক্ষেপের জন্য যথেষ্ট।’

প্রেসিডেন্টের এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন জেমস অ্যালেন ফক্সও। নর্থইস্টার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের এখন ‘সবার জন্য বন্দুক’ নীতি চলছে এবং এই নীতি চলতে থাকলে সামনের দিনগুলোতে বন্দুক সহিংসতা আরও ভয়াবহ রূপ নেবে।

‘আমাদের উচিত যত শিগগির সম্ভব এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা প্রয়োজন,’ এপি নিউজকে বলেন ফক্স।