মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার ভাটেরা ইউনিয়নের কৃষ্ণপুর গ্রামের মেয়ে উচ্চশিক্ষায় যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে আধুনিক পোশাক পরিধান করাসহ এক অমুসলিম ছেলেকে বিয়ে করার অভিযোগ তুলে ঝর্ণা চৌধুরী নামে এক শিক্ষার্থীর পরিবারকে স্থানীয় মসজিদ কমিটি সমাজচ্যুত করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
সোমবার (৩১ জানুয়ারি) কুলাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছে ভুক্তভোগীর পরিবার।
ঝর্ণা চৌধুরীর পরিবারের লিখিত অভিযোগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উচ্চশিক্ষার জন্য গত ২৬ ডিসেম্বর আমেরিকায় যান ঝর্ণা চৌধুরী। ২৭ ডিসেম্বর থেকে স্থানীয় একটি ‘মৌলবাদী গোষ্ঠী’ ফেসবুকে এ নিয়ে নানান কুৎসা রটান। এরপর ২৮ ডিসেম্বর শুক্রবার স্থানীয় ভাটেরা বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটি ঝর্ণার বাবা আব্দুল হাই চৌধুরী গুলাবের বিরুদ্ধে সালিশ বৈঠকে বসেন। কিন্তু তিনি গুরুতর অসুস্থ থাকায় বৈঠকে উপস্থিত হতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে মসজিদ পঞ্চায়েত কমিটির সভাপতি মাখন মিয়া ও সম্পাদক আমিন মিয়ার নির্দেশে তাদের একঘরে করে দেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে ঝর্ণা চৌধুরী বলেন, ‘উচ্চশিক্ষার্থে যুক্তরাষ্ট্রে আসাকে কেন্দ্র করে এলাকার কিছু অতি উৎসাহী মানুষ স্থানীয় মসজিদে আমাকে নিয়ে বিচার বসান। আমার বাবাকে সেই বিচারে উপস্থিত হতে বলেন। কিন্তু ৭০ বছর বয়সী আমার বাবার ইতোমধ্যে তিনবার মিনি স্ট্রোক হয়েছে। ডাক্তার বিশ্রামে থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন। সম্প্রতি তার আবার ডিমেনশিয়া (ভুলে যাওয়ার অসুখ) ধরা পড়েছে। তিনি বিচারে না যাওয়ায় আমার পরিবারকে একঘরে করে দেওয়া হয়েছে।’
এ খবর পেয়ে ঝর্ণা চৌধুরী মসজিদ কমিটির সেক্রেটারি আমিন মিয়ার কাছে অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চান। জবাবে তিনি বলেন, ‘আমেরিকায় গিয়ে আমার এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী একজনকে বিয়ে করেছি আমি। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। তাছাড়া আমার বাবা কেন তাদের নির্দেশ মানেননি, তাই আমার পরিবারকে একঘরে করা হয়েছে।’
স্থানীয় ভাটেরা ইউপি চেয়ারম্যান সৈয়দ এ কে এম নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ঝর্ণাকে নিয়ে আগে যারা অপপ্রচার চালিয়েছে তাদেরকে আমি সতর্ক করে দিয়েছি। এখন ঝর্ণার পরিবারকে সামাজিক নিরাপত্তা দিতে আমি খোঁজখবর রাখছি’।
এ বিষয়ে ইউএনও এটিএম ফরহাদ চৌধুরী বলেন, একটি অভিযোগ পেয়েছি। সামাজিকভাবে তাদেরকে যেন কোনো ধরনের হয়রানি না করা হয়। তার জন্য আমি কমিটিকে সতর্ক করে দিয়েছি। সেই সঙ্গে আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি উভয়পক্ষকে অফিসে আসতে বলেছি। ঝর্ণার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় থানাকেও অবগত করা হয়েছে।