মানবদেহের হৃৎপিণ্ডের বিরল প্রদাহে ফাইজার-মডার্না টিকার যোগ আছে : ইএমএ

0
26
মানবদেহের হৃৎপিণ্ডের বিরল প্রদাহে ফাইজার-মডার্না টিকার যোগ আছে : ইএমএ
মানবদেহের হৃৎপিণ্ডের বিরল প্রদাহে ফাইজার-মডার্না টিকার যোগ আছে : ইএমএ

ইউরোপিয়ান মেডিসিনস এজেন্সি (ইএমএ) স্বীকার করেছে, ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্নার করোনা টিকার সঙ্গে হৃৎপিণ্ডের বিরল প্রদাহ মায়োকার্ডিটি ও পেরিকার্ডিটির সম্পর্ক আছে। এর আগে একই তথ্য দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ বিষয়ক প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ।

হৃৎপিণ্ডের মাংসপেশীর প্রদাহকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় মায়োকার্ডিটি, অন্যদিকে পেরিকার্ডিটি হলো হৃৎপিণ্ডের বাইরে যে তরলযুক্ত পদার্থ থাকে, সেটিতে সৃষ্ট প্রদাহ। তবে স্বাভাবিক অবস্থায়ও হৃৎপিণ্ডের এই ধরনের প্রদাহ বিরল।

এই দুই ধরনের অসুস্থতার উপসর্গসমূহ অবশ্য একই। এগুলো হলো- তীব্র বুকব্যাথা, শ্বাসকষ্ট ও বুক ধরফড় করা। শুক্রবার এক বিবৃতিতে ইএমএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফাইজার বা মডার্নার টিকা নেওয়ার পর কেউ যদি এসব উপসর্গে ভোগেন, সেক্ষেত্রে তার যতদ্রুত সম্ভব চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত।

বিৃবতিতে ইএমএ বলছে, ইউরোপের দেশসমূহে চলমান গণটিকাদান কর্মসূচিতে ফাইজার-বায়োএনটেক টিকার ডোজ ব্যবহার হয়েছে মোট ১৭ কোটি ৭০ লাখ এবং মডার্না টিকার ডোজ ব্যবহার হয়েছে মোট ২ কোটি।

ফাইজার-বায়োএনটেকের ডোজ যারা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে মায়োকার্ডিটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ১৪৫ জন এবং পেরিকার্ডিটিতে ভুগেছেন ১৩৮ জন।

অন্যদিকে, যারা মডার্নার টিকার ডোজ নিয়েছেন, তাদের মধ্যে মায়োকার্ডিটি সংক্রান্ত উপসর্গ দেখা গেছে ১৯ জনের মধ্যে এবং পেরিকার্ডিটিতেও একই সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন।

আক্রান্তদের মধ্যে এ পর্যন্ত ৫ জন মারা গেছেন। তাদের অসুস্থতা বিষয়ক তথ্যাবলী পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এই ৫ জন আগে থেকেই শারীরিক দুর্বলতা ও অসুস্থতায় ভুগছিলেন।

ইএমএ জানিয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না টিকার ডোজ নেওয়ার পর ইউরোপে যারা মায়োকার্ডিটি ও পেরিকার্ডিটির মতো শারীরিক অসুবিধার সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের অধিকাংশই পুরুষ এবং তাদের বয়স ৪০-এর নিচে। টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার ১৪ দিনের মধ্যে তাদের দেহে মায়োকার্ডিটি বা পেরিকার্ডিটির উপসর্গ দেখা দিয়েছে।

তবে ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডার্না টিকার ডোজ নেওয়ার পর উপকৃত জনসমষ্টির তুলনায় ইউরোপে মায়োকার্ডিটি ও পেরিকার্ডিটিতে ভোগা মানুষের সংখ্যা নিতান্তই অল্প উল্লেখ করে শুক্রবারের বিবৃতিতে ইএমএ জানিয়েছে, ‘টিকা নেওয়ার পর এই ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভোগা মানুষের সংখ্যা নিতান্তই অল্প; আর যারা আক্রান্ত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই মৃদু উপসর্গে ভুগেছেন। ডাক্তারের পরামর্শ ও বিশ্রাম নেওয়ার পর তারা প্রায় সবাই সুস্থ হয়ে উঠেছেন বলে জানা গেছে।’

চলতি বছর মার্চে ইসরায়েলের স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছিল, ফাইজার-বায়োএনটেকের করোনা টিকার নেওয়ার পর দেশটিতে ২৭৫ জনের মধ্যে মায়োকার্ডিটি ও পেরিকার্ডিটির উপসর্গ দেখা গেছে এবং আক্রান্তদের অধিকাংশের বয়স ১৬ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে।

তারপর গত ২৬ জুন যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে এক বিবৃতিতে এফডিএ জানায়, ফাইজার ও মডার্না টিকার ডোজ নেওয়ার পর গত ১১ জুন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে মায়োকার্ডিটি অথবা পেরিকার্ডিটির মতো সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন ১ হাজার ২০০ জন।

ভুক্তভোগীদের অধিকাংশই পুরুষ এবং তাদের বয়স ৩০-এর কোটায়। বেশিরভাগই টিকার দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর হয় মায়োকার্ডিটি অথবা পেরিকার্ডিটির মতো শারীরিক সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন।

এদিকে, শুক্রবার এক বিবৃতিতে যুক্তরাজ্যের ওষুধ ও স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা মেডিসিন অ্যান্ড হেলথকেয়ার প্রোডাক্টস রেগুলেটরি এজেন্সি (এমএইচআরএ) জানিয়েছে, ফাইজার-বায়োএনটেক ও মডর্না টিকার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সংক্রান্ত ইএমএর গবেষণা সম্পর্কে সংস্থাটি অবগত এবং এমএইচআরএর পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে তদন্ত ও গবেষণা করা হবে।