বগুড়ায় হোমিও চিকিৎসার আড়ালে মাদক বিক্রি

0
64
হোমিও চিকিৎসার আড়ালে মাদক বিক্রি

সাধারণ রেক্টিফাইড স্পিরিটের সঙ্গে মেশানো হচ্ছে মিথানল (মিথাইল অ্যালকোহল, উড অ্যালকোহল, উড ন্যাপথা, উড স্পিরিট)। এতেই দ্রবণটি হয়ে যাচ্ছে প্রাণঘাতী। এই দ্রবণ পানের ফলাফল নিশ্চিত মৃত্যু বা অঙ্গহানি। সম্প্রতি বগুড়ায় বিষাক্ত স্পিরিট পানে ২৬ জনের মৃত্যু পর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এসব তথ্য।

একইভাবে এর আগেও বগুড়াসহ আশপাশের জেলাগুলোতে বিষাক্ত স্পিরিট পানে শতাধিক মৃত্যুর ঘটনার পরও থামেনি এ অপতৎপরতা। এভাবেই তৈরি হয়েছে শত কোটি টাকার অবৈধ দেশি মাদকের বাজার।

বিষাক্ত স্পিরিট পানে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩৬ ঘণ্টায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৩ জনে। এর মধ্যে ১০ জন বগুড়া শহরে এবং তিনজন শাজাহানপুর উপজেলায়।

তাদের পরিবারের সদস্যদের দাবি, শহরের ফুলবাড়ি এলাকায় পারুল হোমিও হল এবং তিনমাথা রেলগেট এলাকার খান হোমিও হল থেকে কেনা স্পিরিট পান করে তারা অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ ঘটনায় বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রঞ্জুর মিয়ার (৩৩) ভাই মনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) রাতে থানায় মামলা করেন। মামলায় পারুল হোমিও হল এবং পুনম হোমিও হলের মালিক তিন ভাই নুর মোহাম্মদ (৪৮), নূরনবী (৫০) এবং নূরে আলমকে (৫৫) আসামি করা হয়।

এছাড়া শহরের তিনমাথা রেলগেটের খান হোমিও হলের মালিক শাহীনুর রহমানকেও আসামি করা হয়। ঘটনার পর থেকে খান হোমিও হল বন্ধ করে গাঢাকা দিয়েছেন মালিক শাহিনুর রহমান। তার মুঠোফোনও বন্ধ। একইভাবে পারুল ও পুনম হোমিও হলের মালিক তিন ভাই লাপাত্তা।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, বগুড়ায় হোমিও চিকিৎসার আড়ালে মাদক হিসেবে শত শত লিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট বিক্রি হয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে এই স্পিরিট আবার বগুড়া থেকেই পাঠানো হয় উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায়। শুধু বগুড়ায়ই শত কোটি টাকার অবৈধ দেশি মাদকের বাজার রয়েছে।

১৯৯৮ সালে নববর্ষের দিন পারুল হোমিও হলের সরবরাহ করা বিষাক্ত স্পিরিট পানে ৭১ জনের মৃত্যু হয়। পুলিশ, ডিবি ঘুরে মামলাটি শেষ পর্যন্ত সিআইডির হাতে থাকা অবস্থায় চার্জশিট দেয়া হলেও আসামিরা অধরা রয়েছেন। এছাড়া ২০০০ সালে বগুড়ায় বিষাক্ত স্পিরিট পানে ২২ জনের মৃত্যুর ঘটনার সঙ্গেও জড়িত ছিল এই পারুল হোমিও হল।

বগুড়া জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, বগুড়া সার্কেলের আওতায় সাতজন হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, দুটি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও একটি হোমিওপ্যাথিক ল্যাবরেটরির নামে রেক্টিফাইড স্পিরিট ব্যবহারের অনুমোদন রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সরকারি প্রতিষ্ঠান বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জন্য ১০০ লিটার ও সরকার নিয়ন্ত্রিত অ্যাসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের জন্য ৮ হাজার ৫০০ লিটারের অনুমোদন রয়েছে। এছাড়া পারুল হোমিও ল্যাবরেটরির নামে ১০০ লিটার রেক্টিফাইড স্পিরিট ব্যবহারের অনুমোদন নেয়া আছে।