‘তোর ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশে হবে, তার নাম ‘জয়’ রাখবি’

0
57
‘তোর ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশে হবে, তার নাম 'জয়' রাখবি’
‘তোর ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশে হবে, তার নাম 'জয়' রাখবি’

‘আজকের দিনটিও আমার বিশেষ দিন। ১৯৭১ সালের ২৩ মার্চ, পাকিস্তান দিবস। সেদিন বাংলাদেশের কোথাও পাকিস্তানের পতাকা উত্তোলন করেনি। (ধানমন্ডি) ৩২ নম্বরের বাড়িতে আমার বাবা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। তখন আমি কেবল সন্তানসম্ভবা। আমি সাধারণত বাবার হাত-পায়ের নখ কেটে দিতাম, সেটা আমার নিয়মিত কাজ ছিল। সেদিন একমগ পানি নিয়ে বাবার নখ কাটতে বসলাম। সেদিন বাবা বললেন, হ্যাঁ, ভালোভাবে কেটে দে, কারণ পরে আর সুযোগ পাবি কি-না! তবে তোর ছেলে হবে, সে ছেলে স্বাধীন বাংলাদেশে হবে, তার নাম “জয়” রাখবি।’

মঙ্গলবার পাবলিক সার্ভিস দিবস উদযাপন ও জনপ্রশাসন পদক প্রদান অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে অংশ নিয়ে তিনি এ গল্প বলেন।

প্রধানমন্ত্রী ও বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) সকালে এক অনুষ্ঠানে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে তাঁর পিতার সঙ্গে হওয়া এই বিশেষ কথোপকথন সবাইকে শোনান। তিনি জানান, তাঁর ছেলের নাম ‘জয়’ রাখতে বলে দিয়েছিলেন স্বয়ং বঙ্গবন্ধু।

সকালে ‘জাতীয় পাবলিক সার্ভিস দিবস’ উদযাপন এবং ‘জনপ্রশাসন পদক ২০২০ ও ২০২১’ প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রী। রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন তিনি। 

শেখ হাসিনা বলেন, ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস উপলক্ষে ইয়াহিয়া খান ঢাকায়, সারা বাংলাদেশে কিন্তু পাকিস্তানি পতাকা কেউ ওড়ায়নি। সমস্ত বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা ওড়ানো হয়েছিল। ৩২ নম্বরের বাড়িতেও আমার বাবা বাংলাদেশের পতাকা উত্তোলন করলেন। যদিও পাকিস্তানের সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খান ঢাকায় ছিল, কিন্তু তাকে সবাই অস্বীকার করেছিল। 

তিনি বলেন, যখন আমার সন্তান প্রসবের সময় হয় তখন আমাকে হাসপাতালে যেতে দিয়েছিল পাকিস্তানি মিলিটারি। কিন্তু আমার মাকে যেতে দেয়নি। তখন হাসপাতালে ডাক্তার নুরুল ইসলাম সাহেব ছিলেন দায়িত্বে। আমাদের ডাক্তার সুফিয়া খাতুন, তিনি ও ডাক্তার ওদুদ সাহেব, শায়লা আপাও ছিলেন। আমাদের মুহিত সাহেবের বোন, অধ্যাপক শায়লা। আসলে জয়ের জন্মটা মেডিকেল কলেজেই হয়। 

তিনি বলেন, কাজেই এইরকম একটা পরিবেশেই কিন্তু জয়ের জন্ম। সেখানে আমরা ফ্লোরেই থাকতাম। কোনো প্রাইভেসি ছিল না। একতলা একটা বাড়ি। কাজেই ওই অবস্থার মধ্যে খাওয়া দাওয়ার কোনো ঠিক ছিল না। কারণ ওকে (জয়) নিয়ে যখন আমি একটা বাড়ি থেকে আরেকটা বাড়িতে শেল্টার নিই, তখন জানি না কীভাবে বেঁচে ছিলাম। খাওয়া দাওয়া কোনো কিছুর ঠিক ছিল না। আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতাম, আমার বাচ্চাটা যেন একটা সুস্থ বাচ্চা হয়। আমার মা সবসময় সেই দোয়াই করতেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সেই জয়ের জন্মদিন, আজ তার ৫০ বছর হলো। এই করোনার কারণে আমরা সবাই এক হতে পারলাম না। এইটা আরেকটা দুঃখ। আপনারা এই দিনটি স্মরণ করছেন, সেই জন্য আপনাদের ধন্যবাদ জানাই। আজকে যে ডিজিটাল বাংলাদেশ, আমি আপনাদের সঙ্গে (ভিডিও মাধ্যমে) কথা বলছি, এটা কিন্তু জয়েরই ধারণা, জয়েরই চিন্তা।