টান টান উত্তেজনায় জিম্বাবুয়েকে হারাল বাংলাদেশ। শেষ ওভারের ৬ বলে ১৬ রান। বল হাতে মোসাদ্দেক হোসেন। কি হবে? চাপ বেড়েই চলছে। ছক্কা হজম করে উত্তেজনা বাড়ালেও মোসাদ্দেক। নিরাশ হলেন না তিনি। ওভারের শেষ বল প্রয়োজন ৫ রান। তাঁরপর নাটকীয়তা বাংলাদেশের জয়। যখন দুই দলের খেলোয়াড় মাঠ ছেড়ে গ্যালারীর দিকে, তখন ঘোষণা এলো নো বলের। এবার এক বলে ৪ রান। অবশেষে বাংলাদেশের জয়।
চলতি বিশ্বকাপে তিন ম্যাচ খেলে দুটি জয় নিয়ে সেমির পথে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ দল। অবশ্য সামনে কঠিন দুই প্রতিপক্ষ ভারত-পাকিস্তান!
হোবার্টের ম্যাচের কথাটাই যেন মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন তাসকিন আহমেদ। যেখানে শুরুতেই নেদারল্যান্ডসের দুই উইকেট তুলে নিয়ে জয়ের পথটা তৈরি করে দিয়েছিলেন। এবারও শুরুতেই তার জোড়া আঘাত। এরপর মুস্তাফিজুর রহমানও খোলস ভেঙে যখন বেরিয়ে তখন টাইগারদের আটকায় কে? ষষ্ঠ ওভারে দ্য ফিজ জোড়া উইকেট নিয়ে ম্যাচটা হয়ে যায় বাংলাদেশেরই।
তাসকিন আহমেদ প্রথম ওভারেই তুলে নেন উইকেট। বিস্ময়কর হলেও সত্য চলতি বিশ্বকাপে টানা তিন ম্যাচে নিজের প্রথম ওভারে উইকেট শিকার করলেন তাসকিন। এই পেসার রোববার ফেরান জিম্বাবুয়ের ওয়েসলি মাধেভেরে। তৃতীয় ওভারে এসে ইনফর্ম এই পেসার ফেরান ক্রেইগ আরভিনকে। তার ওভারের চার নম্বরে বলে আরভিন ওয়াইড লাইনের কাছ দিয়ে যাওয়া বলে জায়গায় দাঁড়িয়ে ব্যাট চালান, ব্যস বল ব্যাট ছুঁইয়ে জমা পড়ে নুরুল হাসান সোহানের গ্লাভসে।
তারপর মুস্তাফিজ ম্যাজিক। নেদারল্যান্ডস ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বিশ্বকাপের প্রথম দুই ম্যাচে উইকেট পাননি মুস্তাফিজ। তবে বল হাতে মন্দ ছিলেন না। এবার জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে নিজেকে ফের ফিরে পেলেন কাটার মাস্টার। এক ওভারেই তুলেন ২ উইকেট। মিল্টন শুম্বাকে দিয়ে শুরু। এবার সিকান্দার রাজাকে পথ দেখিয়ে স্বস্তি এনে দেন গ্যালারিতে।
পাওয়ার প্লেতে দারুণ সফল টাইগারদের। ৬ ওভার শেষে ৩৬ রান দিয়ে দল তুলে নেয় জিম্বাবুয়ের ৪ উইকেট। এরপর সে চাপটা জিম্বাবুয়ের ওপর শেষ পর্যন্ত ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। তার পরই শেষ ওভারের নাটক। তবে দিনশেষে হাসিমুখটা বাংলাদেশেরই।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ধীর গতির হলেও শেষটাতে কিছুটা লড়েছে টাইগাররা। প্রথম ১০ ওভারে ৬৩, শেষ ১০ ওভারে ৮৭। তার পথ ধরেই ঠিক দেড়শ বাংলাদেশের। অবশ্য খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আসা নাজমুল হোসেন শান্ত না লড়লে বিপাকেই পড়ে যেতো বাংলাদেশ। লড়েছেন সাকিব আল হাসানও। তাদের ব্যাটেই ভাল একটা ভিত পেয়েছে দল। তবে অন্যরা আরেকটু সঙ্গ দিতে পারলে স্কোরটা আরও বড় হতে পারতো।
কিন্তু জিম্বাবুয়ে সেই সুযোগ দেয়নি। তাদের বোলিং ছিল বেশ আটসাটো। কিন্তু ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ ছাড়ায় স্বস্তি পেয়েছেন গ্যাবায় হাজির বাংলাদেশের দর্শকরা। কিন্তু সেসব আর কাজে লাগাতে পারেননি টাইগার ব্যাটসম্যানরা।
তার আগে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই ভাঙে উদ্বোধনী জুটি। কোন রান না করেই সাজঘরের পথ ধরে বিশ্বকাপের ঠিক আগে দলে আসা সৌম্য সরকার। এমন বিদায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত একটা রেকর্ডের পথেও আছেন সৌম্য। এনিয়ে টি-টোয়েন্টিতে ১১ বার শূন্যতে আউট হলেন বাংলাদেশের এই ব্যাটার। তার চেয়ে বেশি ১২ বার আউট হয়ে দুঃস্বপ্নের রেকর্ডটা দখলে কেভিন ও’ব্রায়েনের।
ফর্ম ধরে রাখার ইঙ্গি দিয়েই শুরুটা হয়েছিল লিটন দাসের। চার মেরে বুঝিয়ে দেন কিছু করতে চান তিনি। কিন্তু তেমন কিছুই করা হলো না এদিন। ব্লেসিং মুজারাবানির বলে স্কুপ করতে গিয়ে শর্ট থার্ড ম্যানে ক্যাচ তুলে দেন। শেষ হয় তার শান্তর সঙ্গে ২৩ বলের ২২ রানের জুটি। ১২ বলে ১৪ তুলে আউট লিটন।
পাওয়ার প্লেতে ৬ ওভারে ৩২ রান তুলতে পারে বাংলাদেশ। হারায় দুই উইকেট। এখানেই বড় পুঁজির সম্ভাবনাটা ধাক্কা খায়। তারপর পথ দেখালেন শান্ত-সাকিব। দুই বাঁহাতি জিম্বাবুয়ের বোলারদের বেশ শাসন করলেন। গ্যাবার উইকেটে বেশ লড়লেন দু’জন। তবে শন উইলিয়ামস ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা এই জুটির সর্বনাশ করে দেন। উইলিয়ামসকে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে ভুল করে বসেন সাকিব। বাংলাদেশ অধিনায়কের টাইমিংটা ঠিকঠাক হয়নি। বল উঁচুতে উঠে জমা হয় ব্লেসিং মুজারাবানির হাতে। ৪৪ বলে ৫৪ রানের এই জুটিই ম্যাচে বাংলাদেশের সেরা।
সাকিব ২০ বলে এক চারে ২৩ রান তুলে ধরেন সাজঘরের পথ সাকিব। তবে নাজমুল হোসেন শান্ত হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন। টি-টোয়েন্টিতে প্রথম অর্ধশতক পেলেন বিশ্বকাপের বড় মঞ্চে। অনেক সমালোচনা সয়ে তাকে দলে রাখা নির্বাচকরা নিশ্চয়ই কিছুটা হলেও স্বস্তি পাচ্ছেন শান্তর ৪৫ বলের ফিফটিতে।
তিন ম্যাচ খেলে ফেললেও এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এটিই বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের প্রথম ফিফটি। আর টি-টোয়েন্টিতে ১১ ম্যাচ পর বাংলাদেশের কোনো ওপেনার তুললেন হাফসেঞ্চুরি। সবশেষ গত ৩১ জুলাইয়ে জিম্বাবুয়েকে পেয়েই ৫৬ রান করেন লিটন।
নিজের সেরা ইনিংস খেলার ম্যাচে শান্ত এক ১ ছক্কা ও ৭ চারে ৫৫ বলে তুলেন ৭১ রান। আফিফ থামেন ১৯ বলে ২৯ রানে। মেহেদী হাসান মিরাজের যায়গায় খেলতে নামা ইয়াসির আলি রাব্বী ১ বলে ১। গ্যাবার টি-টোয়েন্টি আদর্শ উইকেটে পুঁজিটা অবশ্য কম ছিল না সেটি তো দুপুর গড়াতেই প্রমাণ হয়ে গেল!
জিম্বাবুয়ের সঙ্গে ২৫ বছর ধরে খেললেও মজার ব্যাপার হলো বিশ্বকাপে এবারই প্রথম দেখা। আরও একটা প্রথম সঙ্গী হলো বাংলাদেশের। ব্রিসবেনের গ্যাবায় প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমেই হাসিমুখ। এবার অ্যাডিলেড মিশন। যেখানে অপেক্ষায় ভারত-পাকিস্তান। জায়ান্ট বধ করতেই পারলেই খুলে যাবে বিশ্বকাপের সেমি-ফাইনালের দরজা!