
প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের প্রতিষেধক টিকাদান কর্মসূচি নিয়ে বাংলাদেশে এক ধরনের জটিলতা তৈরি হয়েছে। ভারত সরকার রপ্তানি স্থগিত করায় টিকা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। চুক্তি অনুযায়ী, প্রথম ধাপে টিকার চালান পাওয়া গিয়েছিল। তবে দ্বিতীয় ধাপেই ৩০ লাখ ডোজ কম আসে। আর তৃতীয় ধাপে কোনো টিকাই পাওয়া যায়নি। ফলে চুক্তি অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ৮০ লাখ ডোজ টিকা কম পেয়েছে বাংলাদেশ। রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার ফলে এপ্রিল মাসের টিকা পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে টিকা পেতে একাধিক বিকল্প উৎসের খোঁজে নেমেছে বাংলাদেশ। এ জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে একাধিক উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, এসব উদ্যোগে এখনও সাড়া মেলেনি। তবে টিকার বিকল্প উৎস পাওয়া যাবে বলে তিনি আশাবাদী।
জানা গেছে, ইউএনডিপির অর্থায়নে জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকার তিন কোটি ডোজ কেনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু এই টিকা আগামী সেপ্টেম্বরের আগে পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে স্বাস্থ্য বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে। এ ছাড়া উন্মুক্ত আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে তিন কোটি ডোজ টিকা কেনার জন্য সরকারের পক্ষ থেকে আরও একটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তবে সারাবিশ্বে টিকা সংকটের কারণে সেই প্রচেষ্টাও দ্রুত সফল হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
এর বাইরে টিকা উৎপাদনে ব্যবহূত কাঁচামালের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকাকে এবং ওষুধ শিল্প উদ্যোক্তাদের পক্ষ থেকে অন্য কয়েকটি টিকা উদ্ভাবকদের কাছে চিঠি দিলেও তাতে সাড়া মেলেনি।
বর্তমানে করোনাভাইরাস প্রতিষেধক টিকার মধ্যে ফাইজার-বায়োএনটেক, মডার্না, অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদন পেয়েছে। দেশীয় ওষুধ কোম্পানি ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস কাঁচামাল পেলে এ চারটি টিকাই বাংলাদেশে তৈরিতে সক্ষম। ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের পক্ষ থেকে টিকা উদ্ভাবক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে কাঁচামাল সরবরাহের আবেদন করা হয়েছে। কিন্তু এখনও সাড়া মেলেনি।
ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল মুকতাদির বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শর্ত পূরণ করে টিকা উৎপাদনের জন্য তাদের আন্তর্জাতিক মানের ল্যাবরেটরি রয়েছে। বিষয়টি উল্লেখ করে টিকা উদ্ভাবক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকেও বিষয়টি চিঠি দিয়ে অবহিত করা হয়েছে। সরকার ও ইনসেপ্টার পক্ষ থেকে তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। কিন্তু এখনও ইতিবাচক উত্তর পাওয়া যায়নি।
আবদুল মুকতাদির বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদিত কোনো টিকার কাঁচামাল পেলে ইনসেপ্টা প্রতিবছর ৫০ কোটি ডোজ টিকা উৎপাদনে সক্ষম। সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে টিকা উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠানগুলো কাঁচামাল সরবরাহ করবে আশা প্রকাশ করে তিনি বলেন, বিশ্বজুড়ে টিকা সংকট দূর করতে এর বিকল্প নেই।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র বলছে, শুধু কাঁচামাল পেলেই এ টিকা তৈরি করা সম্ভব হবে না। এ জন্য ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরীক্ষাগারকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মান অনুযায়ী হতে হবে। সে জন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সহায়তা চেয়ে গত সপ্তাহে চিঠি দেওয়া হয়েছে। ওই চিঠির জবাব এখনও আসেনি।
অপর একটি সূত্র বলছে, শুরুতে চীনের একটি প্রতিষ্ঠান ও রাশিয়ার স্পুটনিক বাংলাদেশে টিকা সরবরাহের প্রস্তাব দিয়েছিল। একই সঙ্গে টিকা তৈরির সামর্থ্য থাকলে বাংলাদেশে কাঁচামালও সরবরাহ করার কথা বলেছিল দেশ দুটি। কিন্তু সেরাম ইনস্টিটিউটের টিকা চলে আসায় চীন ও রাশিয়া পিছিয়ে যায়। এখন সংকটের মুখে সেরামের বিকল্প হিসেবে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে সরকারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে বলে একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।