করোনা নিয়ন্ত্রণে সীমান্ত বন্ধ, তবু আসছে মানুষ

0
31
সীমান্ত বন্ধ তবু আসছে মানুষ
সীমান্ত বন্ধ তবু আসছে মানুষ

করোনা নিয়ন্ত্রণে সরকার সীমান্ত বন্ধের মেয়াদ আরো দুই সপ্তাহ বাড়িয়েছে। তবুও সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকছে করোনা রোগী। যা দেশের জন্য অশনি সংকেত। নওগাঁ, চুয়াডাঙ্গা, যশোরসহ বিভিন্ন সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে অবৈধভাবে ভারত থেকে প্রতিদিনই আসছে প্রচুর মানুষ। বাংলাদেশের বেশির ভাগ সীমান্ত ভারতের সঙ্গে স্থল এবং নৌপথ।

রাতের বেলায় বিনা বাধায় এসব স্থলপথ ও নৌ সীমান্ত দিয়ে প্রচুর মানুষ ভারতে যাচ্ছে এবং ভারত থেকে দেশে আসছে। যাদের অনেকের শরীরে করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট। কেউ কেউ জ্বর, সর্দি, কাশিসহ করোনার উপসর্গ নিয়ে চিকিত্সারত রয়েছেন। তবে কেউই কোয়ারেন্টাইনে থাকেননি। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, এখন ভারত থেকে মানুষ আসা এবং কোয়ারেন্টাইনে না থাকা দেশের জন্য ভয়ংকর বিপদ ডেকে আনবে। প্রসঙ্গত, ভারতফেরত কয়েক জনের নমুনা পরীক্ষা করে সম্প্রতি ছয় জনের শরীরে করোনা ভাইরাসের ভীতিকর ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।

করোনা সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউয়ে বিপর্যস্ত ভারত। করোনা ভাইরাসের ভারত ভ্যারিয়েন্ট যেটার বৈজ্ঞানিক নাম দেওয়া হয়েছে বি.১.৬১৭। প্রথম ভারতে শনাক্ত হয় গত অক্টোবর মাসে। পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার যখন হিমশিম খাচ্ছে, তখন করোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীরা আক্রান্ত হচ্ছেন বিরল সংক্রমক ছত্রাক ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে’। যে কারণে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, আবার চিরতরে অন্ধ হতে হচ্ছে। তারপরও বাংলাদেশের মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না। অবাধে ভারতে যাতায়াত করছে অবৈধ পথে।

স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে বারবার বলা হলেও সীমান্ত দিয়ে মানুষ আসা এখনো বন্ধ হয়নি। সরকারি সিদ্ধান্ত একটি গ্রুপ বাস্তাবয়ন করছে না। করোনা নিয়ে ভেতরে ভেতরে রাজনীতি চলছে। এদিকে ঈদ সামনে রেখে ঘরমুখী মানুষের স্রোত নেমেছে রাস্তায়। মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি। দোকানপাট-শপিংমলেও উপচে পড়া ভিড়, স্বাস্থ্যবিধির বালাই সেখানে নেই। এমন অবস্থার মধ্যে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলছেন, করোনা পরিস্থিতি সামনে কোন দিকে যায় তা নির্ভর করছে স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর।

ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ভয়ংকর জানিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, বাংলাদেশে এক সঙ্গে ৭ হাজার করোনা রোগীর চিকিত্সা সেবা দেওয়ার সক্ষমতা রয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্যবিধি না মানার পরিপ্রেক্ষিতে এই রোগীর সংখ্যা যদি ২১ হাজার হয়ে যায়, তখন ভারতের মতো অবস্থা হবে বাংলাদেশে। ভারতে এখন অক্সিজেন ও আইসিইউর অভাবে মানুষ মারা যাচ্ছে।

বিষয়টি অনুধাবন করে দেশবাসীকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা বলেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সব কিছু করা সম্ভব। অনেক প্রদেশে রোগীরা হাসপাতালে সাধারণ বেডও পাচ্ছে না। রাস্তাঘাটে চিকিত্সা না পেয়েই অনেকে মারা যাচ্ছে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ এখনো ঝুঁকিতে আছে। করোনা সংক্রমণের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে নিয়ন্ত্রণে বলা হয়। কিন্তু দেশে ২৪ ঘণ্টায় নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ৮ দশমিক ৯৯ শতাংশ। তাই স্বাস্থ্যবিধি মানতেই হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত চিকিত্সক অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, লকডাউন দিয়েও কাজ হচ্ছে না। স্বাস্থ্যবিধি মানাতে দেশের স্বার্থে কঠোর আইন প্রয়োগ করতে হবে। তিনি বলেন, নিজে সচেতন হতে হবে। নিজে সচেতন হলে পরিবার বাঁচবে, প্রতিবেশী বাঁচবে, দেশ বাঁচবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে সামনে ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। চিকিত্সকরা জানেন কীভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে হবে। সেই মোতাবেক পরামর্শক কমিটি মতামত দিচ্ছে। এসব পরামর্শ বাস্তবায়ন করতে হবে। কিন্তু সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে না। বাস্তবায়নে মনিটরিংও করা হচ্ছে না। যার কারণে চোরাই পথে এখনো ভারত থেকে করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে লোকজন দেশে প্রবেশ করছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল হক বলেন, সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে, মানাতে হবে। কারণ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ভয়াবহ। সম্প্রতি ঐ ভ্যারিয়েন্ট আক্রান্তরা করোনা থেকে সেরে ওঠার পর নতুন করে আক্রান্ত হচ্ছেন বিরল সংক্রমক ছত্রাক ‘ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে’। যে কারণে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, আবার চিরতরে অন্ধ হতে হচ্ছে।

এই ভ্যারিয়েন্ট দেশে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি কোন দিকে যাবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে পরিস্থিতি ভয়ংকরই হবে। তাই ভারত থেকে মানুষ আসা বন্ধ করতে হবে। দেশের মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানাতে বাধ্য করতে হবে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশ এখনো ঝুঁকিতে আছে। দেশে এক সঙ্গে ৭ হাজার করোনা রোগীর চিকিত্সা দেওয়ার সক্ষমতা আছে। এর তিন গুণ রোগী হলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে।