আওয়ামী লীগের টানা ৪১ বছরের সভাপতি শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ তো হীরার টুকরো, যতবার ভেঙেছে আরও জ্বলজ্বল করেছে, নতুনভাবে জ্যোতি ছড়িয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ওপর বারবার আঘাত এসেছে। কিন্তু যতবার আঘাত এসেছে, ততবার আওয়ামী লীগ ঘুরে দাঁড়িয়েছে। এ সংগঠনকে ধ্বংস করার অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু কেউ পারেনি এবং আগামীতেও পারবে না।’
বুধবার (২৩ জুন) বিকেলে আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে এসব কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল, বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন। বাংলাদেশকে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর যে স্বপ্ন ও চিন্তা, সেটা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না। সেটাকে ব্যর্থ করার চেষ্টা হয়েছে। আওয়ামী লীগের নাম মুছতে চেষ্টা করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন সৃষ্টি হয়, তখন থেকেই মুসলিম লীগ আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার চেষ্টা করেছে।’
‘আইয়ুব খান, ইয়াহিয়া খান, জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ এবং খালেদা জিয়া প্রত্যেকে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করতে চেয়েছেন। কত মানুষকে তারা হত্যা করেছেন? লক্ষ্য একটাই আওয়ামী লীগকে শেষ করা। কেন? আওয়ামী লীগ স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে গরিব দুঃখী মানুষের পেটের ভাত হয়, মাথাগোঁজার ঠাঁই পায়, চিকিৎসা পায়, লেখাপড়ার সুযোগ পায়। এটা বোধহয় কিছু শ্রেণির পছন্দ না’ বলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
তিনি বলেন, ‘এই সংগঠন মাটি ও মানুষ থেকে উঠে এসেছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে মুসলিম লীগ সরকারের বিরোধিতা করে এ সংগঠন গড়ে উঠেছে। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্য নিয়ে যে সংগঠনের প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেই সংগঠনকে এতো সহজে শেষ করে দেয়া যায় না। সাময়িক আঘাত আসে, এটা ঠিক।
শেখ হাসিন আরও বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ভেতরের লোকেরাও দলের ক্ষতি করেছে। বহুবার আওয়ামী লীগ ভেঙেছে। মওলানা ভাসানী, ড. কামাল, আবদুর রাজ্জাকরা চলে গিয়ে নতুন দল করেছেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ তো হীরার টুকরো, যতবার ভেঙেছে আরও জ্বলজ্বল করেছে, নতুনভাবে জ্যোতি ছড়িয়েছে।’
বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় এসেছে, দেশে অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সব দিক থেকে উন্নতি করেছে। আজকে বিশ্বে একটা মর্যাদা পেয়েছে। এ জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সর্বস্তরের নেতাকর্মী ও জনগণের প্রতি। সুযোগ পেয়েছি বলেই দেশকে সাজানোর সুযোগ হয়েছে।’
ছোট বোন শেখ রেহানার ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রেহানা তার আগে থেকে যোগাযোগ করা শুরু করেছে, প্রতিবাদ করেছে। সেইসঙ্গে আমাদের প্রতিজ্ঞা ছিল, যে বাংলাদেশ আমার বাবা স্বাধীন করে দিয়ে গেছেন সেই বাংলাদেশকে নিয়ে তার যে স্বপ্ন, তার যে চিন্তা তার যে আদর্শ এটা কখনো ব্যর্থ হতে পারে না।
১৯৮১ সাল থেকে টানা আওয়ামী লীগ সভাপতির দায়িত্ব পালন করে শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগে ভাঙন ও বিপর্যয়ের কথা কথা তুলে ধরেন।
বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, মাওলানা ভাসানী প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, তিনি সবার আগে আওয়ামী লীগ ভেঙে চলে গেলেন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি করতে। ঠিক এভাবে কতবার আওয়ামী লীগ ভেঙেছে? ১৯৮১ সালে আমার অবর্তমানে আমাকে সভাপতি নির্বাচিত করা হল আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখার জন্য। দুভার্গ্য হলো, আমি প্রবাসে থাকতে যাকে সব থেকে বেশি সংগঠনের জন্য সহযোগিতা করেছি, আমি ফিরে আসলে তিনিই আমাকে সবার আগে ছেড়ে চলে গেলেন। আমাদের আব্দুর রাজ্জাক সাহেব। বারবার তাকে বললাম, আপনার তো যাওয়ার দরকার নাই। আপনি থাকেন, সে পার্টির সেক্রেটারি। না, পার্টি ভেঙে বাকশাল করবো। এরপর ড. কামাল হোসেন, যাকে আমরা রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন করালাম, তার নাম ডাক হলো। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বলে তাকে প্রচার করলাম। তিনি তো বঙ্গবন্ধুর ক্যাবিনেটে একজন মন্ত্রী ছিলেন মাত্র। আমরা প্রচারের মাধ্যমেই তাকে তুলে ধরলাম। যিনি ভালো করে বাংলায় কথাও বলতে পারতেন না। তিনি ১৯৯১ সালে আমার পার্টি ভেঙে চলে গেলেন, আরেকটা পার্টি বানানোরও চেষ্টা করলেন। প্রথমে আওয়ামী লীগই একটা করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে, তারপর গণফোরাম করে চলে গেলেন।
বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ প্রান্ত থেকে সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
গণভবন প্রান্ত থেকে সভা সঞ্চালনা করেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. আবদুস সোবহান গোলাপ।
সভায় ‘‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বের চার দশক: সংগ্রামী নেতা থেকে কালজয়ী রাষ্ট্রনায়ক’’ বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বইটির সম্পাদনা করেন দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ।