অবাক পৃথিবী আগুনের পর্বত

0
130

আমাদের এই সুন্দর পৃথিবী নামের গ্রহটি আধাগলিত পাথর এবং লোহার কোর দিয়ে গঠিত। গলিত পাথরের স্তরটি দু’ভাগে বিভক্ত—আপার ম্যান্টল ও লোয়ার ম্যান্টল। লোহার কোরটিও দু’ভাগে বিভক্ত—আউট কোর ও ইনার কোর। ম্যান্টল ও কোর অঞ্চল দুটি প্রচণ্ড উত্তপ্ত। শুধু খোলস বা ক্রাস্ট স্তরটিই শীতল।

এই ক্রাস্ট স্তরটি আবার ভিন্ন ভিন্ন প্লেটে তৈরি, যার নাম টেকটোনিক প্লেট। এই ক্রাস্টের ওপরই নদী, সাগর, অরণ্য, পাহাড়-পর্বত ও পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর বসবাস। টেকটোনিক প্লেটগুলো আধাগলিত পাথরের আপার ম্যান্টলের ওপর ভাসমান। ক্রাস্টের কোনো ফাটল দিয়ে যদি ম্যান্টল স্তরের উত্তপ্ত গলিত বস্তু ভূপৃষ্ঠে উঠে আসে, তখনই সৃষ্টি হয় আগ্নেয়গিরির। আগ্নেয়গিরি থেকে বেরিয়ে আসা গলিত বস্তুকে বলা হয় ‘লাভা’। গলিত লাভার সঙ্গে জ্বালামুখ দিয়ে পৃথিবীর গর্ভ থেকে বেরিয়ে আসে ছাইভষ্ম, ধোঁয়া এবং বড় বড় পাথর খণ্ড, যা আকাশ ও ভূখণ্ডে বিস্ফোরিত বোমার স্প্লিন্টারের মতো ছড়িয়ে পড়ে।

পৃথিবীতে বর্তমানে ৫৫০টি জীবন্ত আগ্নেয়গিরি রয়েছে এবং এর অর্ধেকেরই অবস্থান প্রশান্ত মহাসাগরের এপার-ওপার। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত জীবন্ত ও ভয়াবহ আগ্নেয়গিরি ‘মাউন্ট সেন্ট হেলেনস’। এর অবস্থান সিটেলের ১৫৪ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পোর্টল্যান্ডের ৮৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে। জলপ্রপাতের ধারে। প্রাথমিকভাবে এটি পরিচিত ছিল ক্লিকিট্যাটস ভাষায় ‘লওয়ালা-ক্লফ’ নামে, যার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে ধোঁয়া বা আগুনের পর্বত। মাউন্ট সেন্ট হেলেনস-এর নামকরণ হয়েছে ব্রিটিশ কূটনীতিবিদ লর্ড সেন্ট হেলেনসের নামে। আগ্নেয়গিরিটি ১৯৮০ সালের ১৮ মে ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্য বিখ্যাত হয়েছিল। আমেরিকার ইতিহাসে ছিল আগ্নেয়গিরি থেকে সৃষ্ট একটি অত্যন্ত সাংঘাতিক ও অর্থনৈতিক ধ্বংসাত্মক বিস্ফোরণ। এই বিস্ফোরণে ৫৭ ব্যক্তি মারা যায় এবং প্রায় ২০০ ঘরবাড়ি, ৪৭টি সেতু, ২৪ কিলোমিটার রেলপথ এবং ৩০০ কিলোমিটার রাজপথ ধ্বংস হয়।

২০০৫ সালের এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে জানা যায়, বিস্ফোরণের কারণে সেন্ট হেলেনসের চূড়া সেসময় ৯৬৭৭ ফুট থেকে কমে গিয়ে ৮৩৬৪ ফুট হয়েছিল এবং আগ্নেয়গিরির মুখগহ্বর পূর্বের স্থান থেকে দেড় কিলোমিটার পাশে সরে গিয়েছিল। মাউন্ট সেন্ট হেলেনসের বয়স প্রায় ৪০ হাজার বছর। হঠাৎ হঠাৎ জেগে ওঠে। মাউন্ট সেন্ট হেলেনস আগ্নেয়গিরি থেকে বের হওয়া ধোঁয়া ও ছাই প্রায় ৪০ হাজার ফুট পর্যন্ত ওপরে উঠছে। বিজ্ঞানীরা আগ্নেয়গিরিটির জ্বালামুখ এবং ছাইভস্ম এত উঁচুতে উঠে যাওয়ার ব্যাপারটি পর্যবেক্ষণ করে মন্তব্য করেছেন, এখানে বড় ধরনের একটা বিস্ফোরণ ও অগ্ন্যুত্পাতের আয়োজন চলছে। তবে ঠিক কবে এ বিস্ফোরণ বা অগ্ন্যুত্পাত হবে সে বিষয়ে তাঁরা নিশ্চিত নন।