গোল্ডেন গ্লোবসে ইতিহাস গড়লেন এশিয়ার নারী নির্মাতা ক্লোয়ি জাও

0
46
ক্লোয়ি জাও

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা এশীয়দের চোখে আনন্দ অশ্রু! গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসের ৭৮তম আসরে সেরা পরিচালক হয়ে ইতিহাস গড়েছেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী চীনা নারী নির্মাতা ক্লোয়ি জাও। এশিয়ার প্রথম নারী ও অশ্বেতাঙ্গ নারী হিসেবে এই স্বীকৃতি পেলেন তিনি। ‘নোম্যাডল্যান্ড’ ছবিটি তাকে এই পুরস্কার এনে দিয়েছে।

এশিয়ার তরুণীদের জন্য ৩৮ বছর বয়সী ক্লোয়ি জাওয়ের এই অর্জনকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন অসংখ্য সাধারণ মানুষ। তার এই বিজয়কে সর্বত্র নারীদের জয় মনে করছেন তারা। চীনের উইবোসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন সবাই।

হলিউড ফরেন প্রেস অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত গোল্ডেন গ্লোবসের ইতিহাসে ক্লোয়ি জাওয়ের আগে কেবল একজনই সেরা পরিচালক পুরস্কারটি জিতেছিলেন। ১৯৮৪ সালে ৪১তম আসরে ‘ইয়েন্টি’ ছবির জন্য সেরা পরিচালক হয়েছিলেন বারবারা স্ট্রাইস্যান্ড। ক্লোয়িকে টুইটারে অভিনন্দন জানিয়ে ৭৮ বছর বয়সী এই আমেরিকান লিখেছেন, ‘নারীদের জয় সময়ের ব্যাপার। অভিনন্দন ক্লোয়ি! তুমি পুরস্কারটির জন্য উপযুক্ত!’

মনোনয়ন তালিকায় প্রথমবারের মতো একজনের বেশি নারী পরিচালক জায়গা করে নেন। মনোনয়নপ্রাপ্ত অন্য দুই নারী নির্মাতা হলেন এমারাল্ড ফেনেল (প্রমিজিং ইয়াং উইম্যান) এবং রেজিনা কিং (ওয়ান নাইট ইন মায়ামি)। এ বিভাগের বাকি দুই প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ডেভিড ফিঞ্চার (মাঙ্ক) এবং অ্যারন সরকিন (দ্য ট্রায়াল অব দ্য শিকাগো সেভেন)।

গোল্ডেন গ্লোবসের আগের ৭৭ বছরের ইতিহাসে মাত্র পাঁচজন নারী নির্মাতা মনোনয়ন পান। সবশেষ ২০১৪ সালে ‘সেলমা’র জন্য এই তালিকায় যুক্ত হয় আভা ডুভারনের নাম। এবার এক আসরেই তিনজনের নাম পাওয়া গেলো। তাদের মধ্যে ক্লোয়ি জাও মনোনয়ন পেয়েই ইতিহাস গড়েন। গোল্ডেন গ্লোবসের সেরা পরিচালক শাখায় তার মাধ্যমেই প্রথমবার এশিয়ান বংশোদ্ভুত কোনো নারী মনোনয়ন পেলেন।

রবিবার (বাংলাদেশ সময় ১ মার্চ) বিজয়ী তালিকা ঘোষণা করা হয়। অনুষ্ঠানটি যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে রেইনবো রুম থেকে টিনা ফে এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের বেভারলি হিলটন হোটেল থেকে সঞ্চালনা করেন অ্যামি পোহলার। করোনা মহামারির কারণে অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন শুধু সামনের সারির যোদ্ধারা। বিজয়ীরা যার যার ঘরে বসে ভিডিওতে যোগ দিয়েছেন।

হলিউড অভিনেত্রী ব্রাইস ডালাস হাওয়ার্ড রেইনবো রুমের জমকালো মঞ্চ থেকে ভিডিওতে ক্লোয়ি জাওয়ের সঙ্গে যোগ দেন। ইতিহাস গড়ার পর ক্লোয়ি জাও বলেন, ‘আমার যা ভালো লাগে (চলচ্চিত্র নির্মাণ) তা সম্ভব করে দেওয়ার জন্য সবাইকে ধন্যবাদ। আমি সিনেমা বানানো ও গল্প বলার প্রেমে পড়েছিলাম। সিনেমা আমাদের হাসি-কান্না ভাগাভাগি, একে অপরের কাছ থেকে শেখা এবং একে অপরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার সুযোগ দেয়।’

ভেনিস চলচ্চিত্র উৎসবে স্বর্ণসিংহ (গোল্ডেন লায়ন) জিতে ‘নোম্যাডল্যান্ড’ আভাস দিয়েছিল এবারের পুরস্কার মৌসুমে রাজত্ব করবে ছবিটি। এর গল্প ষাটোর্ধ্ব বিধবা ফার্নকে ঘিরে। ২০০৮ সালে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দার সময় ভবঘুরে জীবন কাটান তিনি। নিজের ভ্যানকে ভ্রাম্যমাণ বাড়িতে রূপ দিয়ে ঘুরে বেড়ান। চলতে চলতে মৌসুমি চাকরি জুটিয়ে নেন। এ চরিত্রে অভিনয় করেছেন অস্কারজয়ী অভিনেত্রী ফ্রান্সেস ম্যাকডরম্যান্ড।

ক্লোয়ি জাওয়ের সুবাদে ১০ বছর পর ভেনিস উৎসবের সর্বোচ্চ সম্মান ওঠে কোনও নারী নির্মাতার হাতে। উৎসব দুনিয়ায় অনেক আগেই নিজের জাত চিনিয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালে সানড্যান্স চলচ্চিত্র উৎসবে তার প্রথম ছবি ‘সংস মাই ব্রাদার টট মি’র উদ্বোধনী প্রদর্শনী হয়। এরপর কান উৎসবের প্যারালাল বিভাগ ডিরেক্টর’স ফোর্টনাইটে এটি স্থান পায়।