সুবর্ণজয়ন্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

0
133

আজ ১২ জানুয়ারি জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠানটির ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের রানি খ্যাত বিশ্ববিদ্যালয়টি রাজধানী শহর ঢাকার অদূরে সাভার এলাকায় প্রায় ৭০০ একর জায়গা নিয়ে অবস্থিত। ১৯৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও প্রতিষ্ঠানটির সম্পূর্ণ কাজ শেষ হয় ১৯৭২ সালে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম উপাচার্য নিযুক্ত হন অধ্যাপক মফিজ উদ্দিন। ১৯৭১ সালের ১২ জানুয়ারি তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর বিশ্ববিদ্যালয়টি উদ্বোধন করেন। ১৯৭০ সালে জাহাঙ্গীরনগর মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় নামে যাত্রা শুরু করা বিশ্ববিদ্যালয়টি নাম পরিবর্তন করে ১৯৭৩ সালে নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। মোগল আমলে ঢাকা শহরের নাম ছিল জাহাঙ্গীরনগর। মূলত তা থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়টির নামকরণ করা হয় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রথম ব্যাচে চারটি বিভাগে ১৫০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়টি। প্রতিষ্ঠাকালীন বিভাগ চারটি হলো, অর্থনীতি, ভূগোল, গণিত ও পরিসংখ্যান। বর্তমানে ছয়টি অনুষদ ও চারটি ইনস্টিটিউটের অধীনে ৩৭টি বিভাগ নিয়ে চলমান দেশের একমাত্র পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়টি। বাংলাদেশের প্রথম নৃবিজ্ঞান ও ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ চালু হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে। এছাড়াও দেশের একমাত্র প্রত্নতত্ত্ব বিভাগও চালু আছে জাবিতে। বর্তমানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও ডক্টরেট পর্যায়ে প্রায় ১৭ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত। ছেলেদের জন্য রয়েছে আটটি হল ও মেয়েদের জন্য আটটি হল। মোট ১৬টি হলে আবাসিকভাবে থাকছে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপুল এই শিক্ষার্থী। সিট সংকট নিরসনে আরো তিনটি হলের কাজ চলমান।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই নানা ধরনের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ। আন্দোলন-সংগ্রামের পাশাপাশি নানা উত্সব পালনেও যেন পটু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। তাই তো জাবিকে বলা হয় সাংস্কৃতিক রাজধানী। জাহাঙ্গীরনগর মানেই যেন সব ধরনের উৎসব ঘটা করে পালন করা। হিম উৎসব, চৈত্রসংক্রান্তি, পহেলা বৈশাখসহ আবহমান বাংলার সব ধরনের উৎসবের আয়োজন করা হয়ে থাকে জাবিতে। এছাড়াও, বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের তাত্পর্য রক্ষার্থে এবং শিক্ষার্থীদের ভেতর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বৃদ্ধিতে নির্মিত রয়েছে বিভিন্ন ভাস্কর্য। মুক্তিযুদ্ধের প্রতীক হিসেবে ৫১ ফুট ব্যাস ও ৭১ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট দেশের সর্ববৃহত্ শহিদ মিনারটি অবস্থিত জাবি প্রাঙ্গণে। দেশের সর্ববৃহৎ গবেষণাগার সৈয়দ ওয়াজেদ আলী গবেষণাগারটি স্থাপিত জাবিতেই। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির চারপাশ ১৬টি ছোটবড় জলাশয় দ্বারা আবৃত। শীতকাল আসতে না আসতেই নানা ধরনের অতিথি পাখির আগমনে মুখরিত হয় জলাশয়গুলো। তাই তো জাবিকে বলা হয় অতিথি পাখির অভয়ারণ্য। শহর থেকে দূরে যানবাহন ও কোলাহল মুক্ত এই মনোরম দৃশ্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন অনেক মানুষ।

এত সাফল্যের আড়ালেও রয়েছে কিছু ব্যর্থতার গল্প। বর্তমান সময়ে নানা সমস্যায় জর্জরিত বিশ্ববিদ্যালয়টি। একটি পূর্ণাঙ্গ আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হলেও আবাসিক হলগুলোতে রয়েছে শিক্ষার্থীদের সিট সংকট। বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণার মান নিয়ে রয়েছে নানা বিতর্ক। এছাড়াও, সেশন জট, আবাসিক হলগুলোতে নিম্নমানের খাবার, উইকেন্ড প্রোগ্রামের দৌরাত্ম্য, বাহিরাগতদের উৎপাতসহ রয়েছে বিভিন্ন সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানে প্রয়োজন কিছু কার্যকর পদক্ষেপ। যেমন, শুরুতেই সমাধান করতে হবে আবাসিক হলগুলোতে সিট সমস্যার। নির্দিষ্ট সিটের বিপরীতে নির্দিষ্ট শিক্ষার্থী ভর্তি করাতে হবে। সেশন জট নিরসনে গ্রহণ করতে হবে জরুরি পদক্ষেপ। নির্দিষ্ট সময়ে ক্লাস পরীক্ষা শেষ করায় মনোনিবেশ করতে হবে শিক্ষকদের। আবাসিক হলগুলোর পরিবেশ ও খাবারের মান উন্নয়নে আরোপ করতে হবে বিশেষ সতর্কতা। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার সুবিধার কথা মাথায় রেখে বাড়াতে হবে দ্রুতগতির ইন্টারনেটসেবা। এছাড়া, শিক্ষার্থীদের জ্ঞান বিকাশে আয়োজন করতে হবে বিভিন্ন ধরনের সেমিনার। অনেক ক্ষেত্রেই উইকেন্ড প্রোগ্রামের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হতে দেখা যায় নিয়মিত শিক্ষার্থীদের, এক্ষেত্রে নিতে হবে কার্যকরি পদক্ষেপ। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের দিনসহ ছুটির দিনগুলোতে বহিরাগতদের উপচেপড়া ভিড় থাকে পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে। এতে অনেক সময় বিপাকে পড়তে হয় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের। তাই বহিরাগতদের অবাধ প্রবেশে আরোপ করতে হবে কঠোরতা। সর্বোপরি, শিক্ষার মান বাড়াতে এবং শিক্ষার্থীদের সুবিধা-অসুবিধার কথা মাথায় রেখে জোরদার করতে হবে সব সুযোগ-সুবিধা। শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রেখে সামনে এগিয়ে যাবে এমনটিই প্রত্যাশা শিক্ষার্থীদের।

লেখক: শিক্ষার্থী, সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম অধ্যয়ন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়