রাঙামাটির পাহাড়ে হাসছে ঝলমলে সূর্যমুখী

0
38
সূর্যমুখী
সূর্যমুখী

সবুজ পাহাড়ে হাসছে সূর্যমুখী। ভোর হলেই সোনা রোদে চোখ মেলে ঝলমলে সূর্যমুখী। সূর্য মামার সঙ্গে রাঙামাটির সূর্যমুখীর বাগানও জেগে ওঠে। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মাইলের পর দিগন্ত বিস্তৃৃত ক্ষেতে সূর্যমুখীর চাষ। যতদূর চোখ যায় সোনা রোদের সঙ্গে সূর্যমুখীর হলুদ আভা। সবুজ পাতার আড়ালে মুখ উঁচু করে আছে সূর্যমুখী।

দেখতে কিছুটা সূর্যের মতো। সূর্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে তাই এ ফুলের নাম সূর্যমুখী। এ ফুল আকর্ষণ কেড়েছে স্থানীয়দের। একই সাথে পাহাড়ে কৃষি জমিতে তামাকের আগ্রাসন কমাতে সূর্যমুখী চাষে উৎসাহিত করছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী হরিণা ও ভূষণছড়া এ্যারাবোনিয়া এলাকার ভাইজ্যাতলা গ্রামের কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাগান করেছে প্রায় এক একর জমিতে। বাগান জুড়ে ফুলের আবাদ হয়েছে ব্যাপক। কৃষি বিভাগের সহায়তায় উপযুক্ত চাষাবাদের কারণে প্রথম চাষে বাম্পার ফলন পেয়েছে কৃষকরা।

ফুলে ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। তাই দেখে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। কম খরজে বেশি লাভের সূর্যমূখী চাষের দিকে ঝুঁকছে অনেক চাষি। তাই বরকল উপজেলা জুড়ে সূর্যমুখী চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সূর্যমুখী এক ধরনের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এ বীজ হাঁস-মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয়। সূর্যমুখীর চাষ সারা বছর করা যায়।

তবে অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর) চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রি সেলিসিয়াস’র নিচে হলে ১০-১২ দিন পরে বীজ বপন করতে হয়। খরিপ-১ মৌসুমে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ (মধ্য-এপ্রিল থেকে মধ্য-মে) মাসেও এর চাষ করা যায়।

এক হাজার বীজের ওজন ৬০-৬৫ গ্রাম। বীজের রঙ কালো এবং লম্বা ও চেপ্টা। প্রতি গাছে একটি করে মাঝারি আকারের ফুল ধরে থাকে। বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। প্রতি হেক্টরে ১.৩-১.৫ টন ফসল পাওয়া যায়।

রাঙামটির বরকল উপজেলার ভূষণছড়া ইউনিয়নের ভাইজ্যাতলা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল মোনাফ জানান, মাত্র এক একর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ করেন তিনি। তিন কেজি বীজ রোপণ করেন। এ বীজে ফুল হয়েছে বাম্পার।

বাঘাইছড়ি উপজেলার রূপকারী ইউনিয়নের মগবান এলাকার স্নেহাংশু চাকমা বলেন, আমার এক একর চাষের জমি রয়েছে। অতীতে আমি এই জমিতে তামাক চাষ করেছিলাম। কিন্তু পরিবেশের দূষণের কারণে তামাক চাষ ছেড়ে সূর্যমুখী চাষ শুরু করেছি। বর্তমানে ৩৩ শতক জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছি। তবে এজন্য সহায়তা করেছে কৃষি বিভাগ। একই সাথে আমার সূর্যমুখীর বাগানের উৎপাদিত বীজ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর ক্রয় করবে।

রাঙামাটি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষ্ণ প্রসাদ মল্লিক বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পাহাড়ে তামাকের আগ্রাসন বন্ধ করতে কাজ করে যাচ্ছে। রাঙামাটি জেলার নানিয়ারচর উপজেলায় ৫ হেক্টর, বরকল উপজেলায় ২৫ হেক্টর, জুরাছড়ি উপজেলায় ৫ হেক্টর, লংগদু উপজেলার ২০ হেক্টর এবং বাঘাইছড়ি উপজেলায় ১০ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখী চাষের আওতায় আনা হয়েছে। এভাবে যদি চাষিদের চিন্তা-চেতনায় পরিবর্তন আনা যায়, পাহাড়কে তামাকের আগ্রাসন থেকে মুক্ত করা যাবে। ক্ষতিতে হবে না কৃষকদের।