বিশ্বযুদ্ধের পর প্রিন্স ফিলিপ-এলিজাবেথের বিয়েই ছিল সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান

0
33
প্রিন্স ফিলিপ-এলিজাবেথের বিয়ে
প্রিন্স ফিলিপ-এলিজাবেথের বিয়ে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের বিয়েই ছিল সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। রানির প্রতি প্রিন্স ফিলিপের প্রেম ও আন্তরিকতা ছিল অতুলনীয় ও অবিচল। তিনি তার নৌসেনার ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়েছিলেন স্ত্রীর রাজকর্মে সহযোগিতার জন্য। আগামী জুনে ১০০তম জন্মদিন উদযাপন করার কথা ছিল ডিউক অব এডিনবরা প্রিন্স ফিলিপের। গত জানুয়ারিতেই তিনি এবং রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ করোনাভাইরাসের টিকা নেন।

১৯৪৭ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথকে বিয়ে করার পর ১৯৫২ সাল থেকে রাজদায়িত্ব পালন শুরু করেন প্রিন্স ফিলিপ। এককভাবে ২০ সহস্রাধিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন গ্রিস ও ডেনমার্কের এই সাবেক রাজকুমার।

বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী প্রিন্স ফিলিপ তার স্ত্রীর কাজে সহযোগিতা করতে পুরো বিশ্ব ঘুরেছেন। এই সফর যেমন ছিল রাষ্ট্রীয় প্রয়োজনে তেমনি রাজকীয় ভ্রমণও কম ছিল না।

রানির স্বামী হিসেবে গোটা দুনিয়া তাকে চিনলেও ব্রিটেনের মানুষের কাছে রানির পরই তার স্থান। তাদের দীর্ঘ ৭৩ বছরের দাম্পত্যও ব্রিটিশ রাজপরিবারের ইতিহাসে অনন্য নজির হয়ে রয়েছে। সংকটের সময় রানির সবচেয়ে বড় আস্থার জায়গা ছিলেন তিনিই। বহুবার রানি নিজ মুখেও এই ঘোষণা দিয়েছেন।

প্রিন্স ফিলিপকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেতে রাজপরিবারের রক্ষণশীলতাকেও ভাঙতে কুণ্ঠা করেননি রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। কৈশোরেই ব্রিটিশ নৌবাহিনীতে কর্মরত ফিলিপের প্রতি অনুরাগ জন্মায় রানির। কিন্তু বিশ্বযুদ্ধের ক্ষত যাদের হাত ধরে, সেই জার্মানির অভিজাত মহলে ওঠাবসা ছিল ফিলিপের পরিবারের। তিনি ব্রিটেনে চলে এলেও, তার পরিবারের অনেকেই জার্মানিতে থেকে গিয়েছিলেন। এমনকি তার বোনেদের বিয়েও হয়েছিল নাৎসি-সংযোগ থাকা অভিজাত জার্মান পুরুষদের সঙ্গে।

তাই ফিলিপের সঙ্গে রানি এলিজাবেথের বিবাহে অনীহা ছিল রাজ পরিবারের। তবে সব বাধা পেরিয়ে, ১৯৪৭ সালে ২১ বছর বয়সে ফিলিপের সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। তবে সে আমলের প্রিন্সেস এলিজাবেথকে বিয়ে করার জন্য প্রিন্স ফিলিপকেও কম ছাড় দিতে হয়নি। ১৯৪৭ সালে গ্রিক ও ড্যানিশ রাজকীয় উপাধি ছেড়ে দেন তিনি। তার নামের শেষ অংশে যুক্ত হয় মাউন্টব্যাটেন। ব্রিটিশ নাগরিকত্ব গ্রহণ করেন। এরপরই অনুমতি মেলে প্রিন্সেস এলিজাবেথকে বিয়ে করার। তখন পর্যন্ত রানির মুকুট পরেননি এই রাজকুমারি।

গ্রিস ও ডেনমার্কের রাজপরিবারে জন্মগ্রহণকারী প্রিন্স ফিলিপের জন্মসাল ১৯২১। ১৮ বছর বয়সে তিনি রয়্যাল নেভিতে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে সক্রিয় অংশ নেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তাদের বিয়েই ছিল সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠান। রানির প্রতি প্রিন্স ফিলিপের প্রেম ও আন্তরিকতা ছিল অতুলনীয় ও অবিচল। তিনি তার নৌসেনার ক্যারিয়ার ছেড়ে দিয়েছিলেন স্ত্রীর রাজকর্মে সহযোগিতার জন্য।

তাদের চার সন্তান, চালর্স, অ্যান, অ্যান্ড্রু এবং এডওয়ার্ড। নাতি-নাতনি (মোট আটজন) তো বটেই তাদের ঘরের ছেলেমেয়েদের (এ সংখ্যাও ১০টি) ভালোবাসাও পেয়েছেন প্রিন্স ফিলিপ।

বহু দাতব্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল তার। নিয়মিত আর্থিক সহায়তা দিতেন অন্তত ৮০০টি প্রতিষ্ঠানকে। প্রবর্তন করেছিলেন ডিউক অব এডিনবরা অ্যাওয়ার্ড স্কিমের। বন্য প্রাণী সংরক্ষণে প্রচণ্ড আগ্রহী ছিলেন। আগ্রহ ছিল প্রযুক্তি আর খেলাধু‘লা নিয়েও। ১৯৪০-এর দশক থেকেই প্রিন্স ফিলিপ যুক্তরাজ্যের সাধারণ মানুষের জীবনে নিত্য উপস্থিত এক ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

তুলনামূলক সুস্বাস্থ্যের অধিকারী প্রিন্স ফিলিপের অসুস্থতা শুরু হয় ২০১১ সালে। সে বছর তার হার্টে ব্লক ধরা পড়ে। মূলত শারীরিক অসুস্থতার কারণেই ২০১৭ সালে তিনি তার রাজদায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন। শারীরিক নানা সমস্যায় ভুগছিলেন বেশ কিছু দিন ধরেই। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে তিনি সংক্রমণের চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল থেকে ফেরেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন প্রিন্স ফিলিপ। তিনি চিকিৎসককে শারীরিক অস্বস্তির কথা জানালেও কারো কোনও সহযোগিতা ছাড়া একাই হেঁটে হাসপাতালে যান।

এক সপ্তাহ পর বাকিংহাম প্যালেস থেকে জানানো হয়, তাকে সংক্রমণের জন্য চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তবে তিনি ভালো আছেন, চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছেন। হাসপাতাল আর প্রাসাদেই দিন কাটছিল তার। তবে শেষ পর্যন্ত শুক্রবার ৯৯ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন প্রিন্স ফিলিপ।

ডিউক অব এডিনবরার প্রতি শ্রদ্ধায় দেশের সর্বত্র জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ব্রিটিশ সরকার। তার মৃত্যুপরবর্তী কার্যক্রম নিয়ে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। তবে প্রিন্স ফিলিপ আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন যে, সাড়ম্বরপূর্ণ শেষকৃত্য চান না তিনি। সেই মতো ফ্রগমোর কটেজের বাগানেই তাঁকে সমাহিত করা হতে পারে।