প্রণোদনার ঋণের অর্থ পরিশোধ উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন হবে: বিজিএমইএ

0
97

করোনা মহামারিকালে সৃষ্ট পরিস্থিতি সামাল দিতে সরকার শিল্পোদ্যোক্তাদের প্রণোদনার আওতায় স্বল্প সুদে ঋণ সহায়তা দেওয়ার পর ঐ ঋণের অর্থ পরিশোধ শুরু হচ্ছে চলতি মাস থেকে। আবার এটি পরিশোধ করতে হবে পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ। ফলে ফের রপ্তানি কমতির দিকে। গত তিন মাস যাবত্ প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানি কমছে।

এ পরিস্থিতিতে চলতি মাস থেকে প্রণোদনার ঋণের অর্থ পরিশোধ উদ্যোক্তাদের জন্য কঠিন হবে বলে মনে করছেন দেশের সবচেয়ে বড় রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক উদ্যোক্তারা। এ খাতের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে আরো ছয় মাসের জন্য প্রণোদনার ঋণ স্থগিত করার জন্য। একই সঙ্গে ঋণ পরিশোধের সময় ২৪ মাসের বদলে এক বছর বাড়িয়ে ৩৬ মাস করার অনুরোধ তাদের।

সংগঠনটির সভাপতি ড. রুবানা হক এ খাতের বিদ্যমান সংকট তুলে ধরে বলেন, শিল্প আজ মর্মান্তিক পরিস্থিতির দিকে মোড় নিয়েছে। উদ্যোক্তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হলে এ সুবিধা দেওয়া দরকার। অর্থনীতিবিদদের কেউ কেউ মনে করেন, ঋণ পরিশোধে সময়সীমা বাড়িয়ে দেওয়া যেতে পারে। পলিসি রিসার্স ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর ইত্তেফাককে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে ২৪ মাসের মধ্যে এত টাকা ঋণ কেউ পরিশোধ করতে পারবে না। এখনো তো কেউ দাঁড়াতেই পারেনি। ২৪ মাসের মধ্যে দিত কীভাবে। এটিকে বাড়িয়ে দেওয়া দরকার। এতে সরকারের এমন বিশেষ কোনো ক্ষতিও হবে না।

এদিকে করোনার এই কঠিন সময়ে অনেক শিল্পোত্পাদন বন্ধ কিংবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হয়েছিল। অথচ তাদের পুরো গ্যাস ও বিদ্যুতের বিল পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে এমন কঠিন সময়ে উদ্যোক্তাদের এ অর্থও পরিশোধের চাপও রয়েছে। বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক বলেন, করোনার সময়ে উত্পাদন বন্ধ ছিল কিংবা আংশিক হয়েছে। কিন্তু মিনিমাম চার্জ দিতে হচ্ছে। এই দুঃসহ সময়ে এক্ষেত্রে কিছু শিথিলতা এবং ছাড় দেওয়ার জন্য দীর্ঘদিন ধরেই বলে আসছি। কিন্তু কেউ শুনেনি। বিদ্যুত্ ও গ্যাসের বিল কয়েক মাসের জন্য স্থগিতের আবেদন করা হলেও কেউ শুনেনি।

অন্যদিকে এ ধরনের কঠিন সময়ে উদ্যোক্তাদের ব্যবসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার রাস্তাও (এক্সিট পলিসি) খোলা নেই। এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের জন্য ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করছে—তা ভেবে অনেকে শঙ্কিত। এক খোলা চিঠিতে নিজেদের কঠিন পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেছেন বিজিএমইএ সভাপতি। তিনি বলেন, যথাযথ প্রস্থান নীতি (এক্সিট পলিসি) না থাকায় পশ্চিমা ক্রেতাদের দেওলিয়াত্ব বরণ, নির্দয়হীনভাবে ক্রয়াদেশ বাতিলের কারণে এই শিল্প চরমভাবে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। কারখানাগুলো প্রাণান্তকর সংগ্রাম করে কোনোভাবে টিকে রয়েছে। এই শিল্প ভালো করছে এবং সরকারের কাছ থেকে সব সহযোগিতা পাচ্ছে, এই যে একটি ধারণা অনেকেই পোষণ করছেন—তার প্রকৃত পুনর্মূল্যায়ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি।

প্রসঙ্গত, সরকার তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের জন্য বিপুল পরিমাণ প্রণোদনা সহায়তার ঘোষণার দিলেও এর বড় অংশই এখনো বিতরণ হয়নি। এ পরিস্থিতিতে গত তিন দিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক চলতি মাসের তৃতীয় সপ্তাহের মধ্যে প্রণোদনা প্যাকেজের অর্থ পরিশোধের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, এ নির্দেশনা এমন সময়ে দেওয়া হয়েছে, যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে শিল্প গভীর অনিশ্চয়তায় হাবুডুবু খাচ্ছে। এ পরিস্থিতিতে বর্তমান প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণের সুদ অন্ততপক্ষে ছয় মাসের জন্য স্থগিতকরণ অথবা প্রণোদনা পরিশোধের মেয়াদ অন্ততপক্ষে আরো অতিরিক্ত ১ বছর সম্প্রসারিত করা না হলে শিল্পকে টিকিয়ে রাখা দুরূহ হবে।

বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, সারা বিশ্ব দেখেছে, ইউরোপ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লকডাউনের প্রভাব কি। খুচরা বিক্রয় ও চাহিদার ওপর সেগুলো কি প্রভাব রেখেছে। বিশ্ব দেখেছে ক্রিসমাসে স্মরণকালের সবচেয়ে মন্দ কেনাকাটা। এসবের প্রভাবে ২০২০-এর সেপ্টেম্বরের পর থেকে পণ্যের মূল্য কমেছে প্রায় ৫ শতাংশ। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের কারণে অনিশ্চয়তা আর শঙ্কায় আমরা বিপর্যস্ত। ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা এখনো নিশ্চিত হয়নি এবং এর প্রভাব বিশ্ব অর্থনীতিতে বিরাজ করছে। তাই আমাদের আশঙ্কা, রপ্তানির এই নিম্নমুখী প্রবণতা সম্ভবত চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত বজায় থাকবে।

তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে যাওয়ার চিত্র তুলে ধরে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২০২০ সালে পোশাক রপ্তানি কমেছে প্রায় ১৭ শতাংশ। ওভেন পোশাক রপ্তানি বেশি খারাপ করলেও নিটওয়্যার তুলনামূলক স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে।